আজ পবিত্র হজ
আজ সোমবার পবিত্র হজ। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকাঙ্ক্ষায় সৌদি আরবে থাকা ১৫০টি দেশের নাগরিকসহ এবার হজ পালন করছেন ভাগ্যবান ৬০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। আজ সারাদিন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান।
মহামারি করোনার কারণে এবারও হজ ঘিরে ব্যতিক্রমী সব পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হাজিদের সেবা দিতে ৪৫টি স্ট্রোক সেন্টার বসানো হয়েছে। জাবালে রহমত এলাকায় ২৩টি ও মিনা প্রান্তরে থাকবে ২২টি স্ট্রোক সেন্টার। এ ছাড়া ৪২টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থাকবে। হজের স্থানগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিতে কাজ করবে ৩২টি চিকিৎসক দল ও ৩৬টি অ্যাম্বুলেন্স।
এ ছাড়া মক্কার মিউনিসিপালিটি বিদ্যুৎ, সড়ক, যোগাযোগ, ট্যানেল, ব্রিজ, টয়লেট ও ড্রেনের ব্যবস্থা দেখাশোনা করছে। অগ্নিকাণ্ড ও ভারী বর্ষণে করণীয় নির্ধারণ করবে তাদের জরুরি ইউনিট।
দীর্ঘ ৯০ বছরের মধ্যে এবারও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো হজযাত্রীকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সময় যুদ্ধ, বিগ্রহ, বন্যা ও অন্যান্য কারণে ৪০ বারের মতো হজ বন্ধ ছিল। করোনার কারণে এবারও হজযাত্রীরা যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে তাওয়াফ, নামাজে অংশ নেওয়া ও সায়ির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করবের পবিত্র হজ।
ধবধবে সাদা দুই টুকরো কাপড় পরে ইহরাম অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় সূর্যোদয়ের পরই হজযাত্রীরা মিনা থেকে রওনা হন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে। হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হজযাত্রীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পবিত্র এই স্থানে অবস্থান করবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ ইবাদত করবেন সুবিধাজনক জায়গায় বসে।
আরাফাতের মসজিদে নামিরাহ থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর হজের খুতবা দেবেন মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। এ বছরও আরবির পাশাপাশি থাকছে ১০টি ভাষার খুতবা। এবারও হজে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় খুতবা অনুবাদ করা হবে। খুতবা শেষে হজযাত্রীরা জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকির-আসকারে ব্যস্ত থাকবেন তাঁরা।
এরপর হজযাত্রীদের গন্তব্য মুজদালিফার দিকে। মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে সেখানেই রাত্রীযাপন করবেন তাঁরা। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে তারা আবারও মিনায় ফিরবেন। ১০ জিলহজ সেখানে পৌঁছানোর পর হজযাত্রীরা পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করবেন। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। তৃতীয় পর্বে মাথা মুন্ডন করতে হবে। আর চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত করা।
হজযাত্রীরা মক্কায় ফিরে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সায়ি (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবারও মিনায় ফিরে যাবেন। ১১ জিলহজ সেখানকার খিমায় (তাবু) রাতযাপন করবেন। দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। পরদিন ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে একইভাবে তিনটি শয়তানের ওপর নিক্ষেপ করবেন সাতটি করে মোট ২১টি পাথর। এ কাজ শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান।