আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে পুলিৎজার বিজয়ী ফটোসাংবাদিক নিহত
জিতেছিলেন সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার। পেশাগত দায়িত্ব পালনে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাঠাচ্ছিলেন খবর ও ছবি। এরই মধ্যে কান্দাহারের স্পিন বলডাক জেলায় সংঘর্ষ চলাকালে মৃত্যু হলো বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির। তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজাই। সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
আজ শুক্রবার এক টুইটবার্তায় রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজাই লেখেন, ‘গত রাতে কান্দাহারে আমার বন্ধু দানিশ সিদ্দিকির মৃত্যুর খবরে আমি শোকাহত। আফগান বাহিনীর ঘেরাটোপে ছিলেন ভারতীয় এই পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক। কাবুলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাঁর পরিবার ও রয়টার্সের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
সূত্র উদ্ধৃত করে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, কান্দাহারের স্পিন বলডাক জেলায় সংঘর্ষ চলাকালীন নিহত হয়েছেন দানিশ। গত বুধবার এই স্পিন বলডাক এলাকায় পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং দখল করে তালেবান। এই ক্রসিং পাকিস্তান-অধ্যুষিত বেলুচিস্তানের চামানের সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এই ক্রসিং আফগান সরকারের অর্থ উপার্জন, আন্তঃসীমান্ত যাতায়াত এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল বৃহস্পতিবার আফগান বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্পিন বলডাক এলাকা পুনর্দখল করা হয়েছে। যদিও সে দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তালেবান।
সম্প্রতি আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন দানিশ। সেখান থেকে নিয়মিত ছবি ও খবর পাঠাচ্ছিলেন। এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধারের জন্য আফগানি স্পেশাল ফোর্সের একটি অভিযান নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। দানিশের প্রতিবেদনে একাধিক ছবি ছিল। তাঁর তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছিল, কীভাবে আফগান বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে তালেবান। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে দানিশ জানিয়েছিলেন, আফগান স্পেশাল ফোর্সের যে গাড়িতে করে তিনি যাচ্ছিলেন, তাতে রকেট হামলা চালানো হয়। রকেট হামলার দৃশ্যও তাঁর ভিডিওতে ধরা পড়েছিল।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, টুইটারে ভারতীয় এক সাংবাদিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন দানিশ। তিনি আফগান সেনা শিবিরেই ছিলেন। তাঁকে আহত অবস্থায় শিবিরে রেখেই আফগান সেনারা তালেবানবিরোধী অভিযানে গিয়েছিল। কিন্তু, শুক্রবার সকালে পুনরায় তালেবানি হামলার মুখে পড়ে আফগান সেনারা। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় দানিশের। ওই সাংবাদিক জানিয়েছেন, দানিশের দেহাবশেষের ছবিও এসেছে তাঁদের কাছে, কিন্তু তাঁরা তা প্রকাশ করছেন না।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, মুম্বাইয়ে বাড়ি দানিশের। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র ছিলেন তিনি। টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করলেও পরে ফটোসাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। দানিশ ২০১০ সালে রয়টার্সে শিক্ষানবীশ চিত্রসাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এর ছয় বছরের মধ্যেই ইরাকের মসুলের যুদ্ধের ছবি তুলতে যান দানিশ। তিনি ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের ছবিও তোলেন। ২০১৯-২০ সালে হংকং বিক্ষোভ, ২০২০ সালে দিল্লির দাঙ্গার ছবিও তোলেন দানিশ।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের বাহিনী সরিয়ে নেওয়া শুরু করতেই তালেবান একে একে আফগানিস্তানের জেলাগুলোর দখল নিতে শুরু করে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ৪৬০টি জেলার মধ্যে ২০০টির দখল নিয়েছে তালেবান।
কান্দাহারে তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে আফগান সেনারা। দানিশ এই সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকেই পরিস্থিতির ছবি তুলছিলেন কয়েকদিন ধরে। গতকাল বৃহস্পতিবার তালেবানের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি।
দানিশ সিদ্দিকি ২০১৮ সালে সহকর্মী আদনান আবিদির সঙ্গে ফিচার ফেটোগ্রাফিতে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। ভারতের রয়টার্সের আলোকচিত্রী দলটির প্রধান ছিলেন দানিশ। রোহিঙ্গা ইস্যুর সময় দারুণ কাজ করায় পুলিৎজার পুরস্কার পান এই ভারতীয় চিত্র সাংবাদিক। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ক্যামেরায় বার বার উঠে এসেছিল দিল্লির অক্সিজেন সংকট, লকডাউন, করোনাভাইরাস সংকটের নানা ছবি। ভারতের বিভিন্ন স্থানের সে ছবিগুলোতে চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন প্রকৃত পরিস্থিতি।