ইউক্রেনে কিছু রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘৬০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে’
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বলছে—রাশিয়া ইউক্রেনে যেসব আপাত নির্ভুল-নিশানার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশকিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভেদে চরম ব্যর্থ হয়েছে। এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যর্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ।
গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে অবগত তিন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সবাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। কিন্তু, শক্তিমত্তার বিচারে ইউক্রেনের অপেক্ষাকৃত ছোট সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে পরাক্রমশালী রুশ সামরিক বাহিনী এক মাসেও আগ্রাসনের মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেনি বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। তাই, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সত্য হলে, তা রাশিয়ার আপাত সহজ লক্ষ্য, যেমন—ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকে ধরাশায়ী করতে ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যায় সাহায্য করতে পারে বলে জানাচ্ছে রয়টার্স।
গোয়েন্দা তথ্যের সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে, তাঁরা মার্কিন দাবির সমর্থনে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেননি কিংবা এবং রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের এত বেশি ব্যর্থতার কারণ ঠিক কী, তাও প্রকাশ করতে রাজি হননি।
রয়টার্স মার্কিন কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। এ ছাড়া ক্রেমলিন এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
রয়টার্স বলছে—রাশিয়ারক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যভেদে ব্যর্থতার উচ্চহারের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উৎক্ষেপণে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ছোড়ার পরে বিস্ফোরণে ব্যর্থ হওয়া পর্যন্ত যেকোনো কিছু ঘটে থাকতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে গণমাধ্যমকে বলেছেন, পেন্টাগনের হিসাব অনুযায়ী—ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে রাশিয়া সে দেশে বিভিন্ন ধরনের এক হাজার ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে কতটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে কিংবা কতটি ব্যর্থ হয়েছে, তা মার্কিন কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত বলতে পারেননি।
মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে, তিন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্র অনুমান করেছে যে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার দৈনিক পরিবর্তনশীল। কারণ, কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ব্যর্থতার হার কখনও কখনও ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
তিন মার্কিন কর্মকর্তার মধ্যে দুজন বলেছেন, কিছু রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার সর্বাধিক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে। এ ছাড়া এক জন কর্মকর্তা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে—রাশিয়ার আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার দিনভেদে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনে রাশিয়াকে দুধরনের আকাশ থেকে চালিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। এগুলো হলো—কেএইচ-৫৫৫ ও কেএইচ-১০১।
আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে কত শতাংশকে ব্যর্থতার আদর্শ হার বলা যাবে, তা জানাতে পারেনি রয়টার্স। তবে, রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে দুজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ২০ শতাংশ বা তার বেশি হলে, তা ব্যর্থতার উচ্চহার বলে বিবেচিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে—রাশিয়া এ মাসের শুরুর দিকে পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি ইউক্রেনীয় সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছিল। সে সময় রাশিয়ার তার আকাশসীমা থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন—ওই হামলার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যভেদে ব্যর্থতার হার বেশি ছিল। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে ওই রুশ হামলায় ৩৫ জন নিহত হয়।
রাশিয়া ইউক্রেনের অস্ত্রের ডিপোসহ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ঘোষণা দিয়ে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে।
রয়টার্স বলছে—ইউক্রেনে রুশ হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এবং যুদ্ধের জেরে ইউক্রেনের প্রায় সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। রুশ বোমা হামলায় ইউক্রেনের খারকিভসহ বহু শহরের আবাসিক এলাকা, স্কুল ও হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর, আজভ সাগরতীরের বন্দরনগরী মারিউপোল অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে।
তবে রাশিয়া শুরু থেকেই বলছে—রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ অভিযান’ চালাচ্ছে এবং বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার বিষয়টিও রাশিয়া অস্বীকার করে আসছে।