ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ : ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ
মার্কিন সৈন্যরা একটি বিমান মহড়া চালিয়েছে। ব্রিটিশ মেরিনদের রাতের বেলা সৈকতে অবতরণ এবং ইউরোপজুড়ে যুদ্ধবিমান উড়ানোর পর আকাশ থেকে নেমে আসার মহড়া চালিয়েছে ফরাসি ছত্রীসেনারা। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত এস্তোনিয়ায় দিকে ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ছায়ায় প্রশিক্ষণ মহড়া চালাচ্ছে। খবর এএফপির।
এস্তোনিয়ায় ফরাসি সৈন্যদের কমান্ডার এবং স্প্রিং স্টর্ম অনুশীলনে অংশ নেওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল এডোয়ার্ড ব্রোস বলেন, “এই মহড়া প্রমাণ করে সংক্ষিপ্ত নোটিশে আমরা খুব দ্রুত (সেনা) মোতায়েন করতে পারি।”
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ১৫ মাস এবং লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে ন্যাটো নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের এক মাস আগে জোটটি তার পূর্ব সীমান্তের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করছে।
এখন যেহেতু মস্কো কয়েক দশকের স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী নীতি ছিঁড়ে ফেলেছে। এ কারণে ন্যাটো তার প্রতিরক্ষা ও পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
ইউরোপে ন্যাটোর সর্বোচ্চ কমান্ডার মার্কিন জেনারেল ক্রিস্টোফার ক্যাভোলি বলেন, “জোটের মধ্যে এই উদ্যোগ বড় পরিবর্তন আনবে, যা আমাদের ভূখণ্ডের প্রতি ইঞ্চি রক্ষার জন্য বড় পরিসরে অভিযানের উপযোগী করবে। আমরা যে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি, তার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।”
ইউক্রেনে রাশিয়ার সৈন্যদের ধ্বংসযজ্ঞে প্রভাবিত হয়ে গত বছর মাদ্রিদে একটি শীর্ষ সম্মেলনে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার নীতিতে ফিরে আসে ন্যাটো। এর অর্থ হলো সীমান্তে মস্কোর যেকোনো আক্রমণ থামানো এবং বাল্টিক দেশগুলোর মতো ফ্রন্টলাইন অঞ্চলকে হস্তান্তর না করা, যা পরে পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন হবে।
এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ক্রিস্টজান মে বলেন, “এটি পরিষ্কার যে, ন্যাটো একটি কৌশলগত পরিবর্তন এনেছে। সম্মিলিত প্রতিরক্ষা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং আমাদের ঘরকে সাজাতে হবে।”
মস্কো ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে জোটটি তার পূর্ব দিকে আরও কয়েক হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে। মস্কোর ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং বাল্টিক দেশগুলোত আরও চারটি বহুজাতিক ‘যোদ্ধা গোষ্ঠী’ মোতায়েন করেছে তারা।
ন্যাটো সদস্যরা এখন পরিকল্পনা করছে, কীভাবে বাল্টিক দেশ এবং পোল্যান্ডে মোতায়েন করা ব্রিগেডের আকার বৃদ্ধি করা যায়। এর অর্থ ‘যেখানে এবং যখন প্রয়োজন হয়’ সেজন্য আরও হাজার হাজার সৈন্য নিযুক্ত করা।
এস্তোনিয়ার জন্য ব্রিটেনের নিজস্ব ঘাঁটিতে সৈন্যরা প্রস্তুত থাকবে। দেশটির অবস্থান শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে মোটামুটি এক হাজার ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্য অবস্থান নিয়েছে।
যদিও এস্তোনিয়া এই মডেলে সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে, তবে তাদের প্রতিবেশী লিথুয়ানিয়া তাদের দেশে পর্যায়ক্রমে আরও সৈন্য চায় এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের প্রধান অংশীদার জার্মানির সঙ্গে আলোচনা করছে। ফ্রন্টলাইন দেশগুলোর সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই সেনা মোতায়েন ন্যাটোর সম্মুখ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ন্যাটো কমান্ডাররা সদর দপ্তরে ফিরে আরও বিস্তারিত পরিকল্পনা করছেন—কীভাবে জোট প্রতিটি অঞ্চলকে রক্ষা করবে। ওই পরিকল্পনা ভিলনিয়াসের শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা অনুমোদন দেবেন।
ওই বিস্তারিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কত সৈন্য কোন দেশ থেকে কোথায় যাবে, জাতীয় ও ন্যাটো প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা একীভূত করা এবং নতুন উদ্যোগে ব্যয়ের স্পষ্ট অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা।
ন্যাটো সদস্যপদ ফিনল্যান্ড ও শেষপর্যন্ত সুইডেনকে পূর্ব দিকের অংশকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তবে কমান্ডারদের অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রতিবেশীরা কীভাবে এই বৃহত্তর পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাবে।
৩০ দিনের মধ্যে মোতায়েনের জন্য ৩ লাখ সৈন্যের একটি বহর প্রস্তুতের পরিকল্পনা করেছে মিত্ররা এবং সৈন্যদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে জুনের শেষে একটি সম্মেলন করবে তারা।