ইন্দোনেশিয়ায় করোনাজনিত সংকট চরমে, আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরাও
নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ এবং এর প্রাণঘাতী ভেরিয়্যান্টের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় সংকটের কেন্দ্রে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। দেশটিতে করোনায় এখন পর্যন্ত ৪০১ চিকিৎসক মারা গেছেন। বার্তা সংস্থা এএনআই’র বরাত দিয়ে দ্য ইকোনমিক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এক দিনে ২০ হাজারের বেশি মানুষ শনাক্ত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এটি দেশে করোনা সংক্রমণে এ যাবৎকালের রেকর্ড। জাকার্তার হাসাপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ঝুঁকি প্রশমন টিম জানিয়েছে, করোনাভাইরাস শুরুর পর এ পর্যন্ত দেশটিতে ৪০১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন চীনের তৈরি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন ডোজ সম্পূর্ণ করেছিলেন।
ঝুঁকি প্রশমন টিম আরও জানায়, পরিস্থিতি খারাপ হয় যখন সিনোভ্যাকের টিকা নেওয়া ৩৫৮ জন মেডিকেল কর্মী কুদুসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্ত হন।
গত জানুয়ারিতে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করলেও ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা পাঁচ শতাংশেরও কম মানুষ টিকা পেয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই সিনোভ্যাকের টিকা নিয়েছেন। সিনোভ্যাকের টিকা করোনার কিছু নির্দিষ্ট ভ্যারিয়্যান্ট প্রতিরোধে কম কার্যকর বলে ধারণা করা হয়।
কুদুসে ডেল্টা ভেরিয়্যান্টের সংক্রমণ হঠাৎই খুব দ্রুত ছড়িয়েছে। ডেল্টা ভেরিয়্যান্টে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন ৩০ জন সংক্রমিত হয়েছে যা দুই সপ্তাহ পর ৪০০ জনে পৌঁছায়।
করোনা প্রতিরোধে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে চীনের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং তদারকি করছে চীন সরকার। ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। গোটা দেশকে ভালোভাবে টিকার আওতায় আনতে ইন্দোনেশিয়ার এখনও ৩৬০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এত বিপুল টিকা সরবরাহ করতে পারছে কেবল সিনোভ্যাকই।
ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরি সেবা বিভাগে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত। তাঁদের মাথাব্যাথার আরেকটি কারণ ভ্যাকসিন নিয়ে সংশয়। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গোলিয়া, সিচিলিস ও বাহরাইনের মতো দেশ চীনের ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করে এখন ব্যাপক সংক্রমণের মুখোমুখি। এই দেশগুলোর জনসংখ্যার ৫০ থেকে ৬৮ শতাংশকে চীনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব দেশগুলো আবার সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রমণের ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
চীনের ভ্যাকসিন কূটনীতিকে বৈশ্বিক শক্তির বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বিশ্বে চীনা ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।