পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আজই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এক র‌্যালিতে এ কথা বলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যা দেশটির বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।

রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা আজ ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করব এবং তাকে আদালতে হাজির করব।’ 

গতকাল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধানের দুটি জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল দেশটির আদালত। নারী বিচারক ও পুলিশকে হুমকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা হয়। তবে, তোষাখানা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

এদিকে, আজ দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর লাহোরের জামান পার্কের বাড়িতে যায় ইসলামাবাদ পুলিশ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পিটিআই নেতাকর্মীদের। তাদের সরিয়ে দিতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এরপরেই কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানান ইমরান খান। তাদের আহ্বানের পরেই করাচি, পেশোয়ার, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের রাস্তায় বিক্ষোভে নামের পিটিআই কর্মীরা।

পাকিস্তানের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ডন পত্রিকা জানায়, আজ দুপুর ২টার দিকে ইমরানকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর লাহোরের জামান পার্কের বাড়িতে যায় ইসলামাবাদ পুলিশ। তখন সেখানে ছিলেন ইমরানের দল পিটিআইয়ের কয়েকশ কর্মী-সমর্থক। পুলিশ ইমরানকে গ্রেপ্তারে বাড়ির ভেতর যেতে চাইলে এসব কর্মী-সমর্থক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাটকেল ছোড়ে।

এ সময় পুলিশ ইমরানের সমর্থকদের লাঠিপেটা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এতে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ইমরানের সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইমরানের সমর্থক ছাড়া পুলিশ সদস্যও আছেন।

ডন বলছে, করাচির ফোরকে চৌরঙ্গি, ফাইভস্টার চৌরঙ্গি, বানারস চক, আল-আসিফ স্কয়ার, শাহীন চক, মির্জা আদম খান চক ও মুরগি খান্না এলাকায় বিক্ষোভ করছে পিটিআই সমর্থকরা। আর পেশোয়ারের প্রেসক্লাবের বাইরে বিক্ষোভ করছে পিটিআই কর্মীরা। তারা শের শাহ সুরি রোড অবরোধ করে রেখেছে।

এদিকে, ইসলামাবাদের জামান পার্ক বাদেও টার্নল রোড অবরোধ করে। তবে, পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আর রাওয়ালপিন্ডিতে পিটিআই নেতাকর্মীরা কমিটি চক পর্যন্ত মিছিল করে এবং লিয়াকতবাগে জড় হয়। কিন্তু, পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, গ্রেপ্তারের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে একটি বার্তা দিয়েছেন ইমরান খান। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে। তারা ভাবছে, আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে জাতি শান্ত হয়ে যাবে। আপনারা তাদের ভুল প্রমাণিত করছেন।’ 

পিটিআই কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় আসার আহ্বানও জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমার সঙ্গে কিছু হয়ে যায় ও আমাকে জেলে পাঠানো হয় কিংবা হত্যা করা হয়, আপনারা আমাকে ছাড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। আপনারা চোরদের দাসত্ব মেনে নেবেন না।’

ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। এমনকি ক্ষমতা হারানোর জন্য বিদেশিদের দায়ী করেছেন তিনি। ক্ষমতা হারানোর পর ইমরানকে হত্যার জন্য হামলা চালানোও হয়।

বিভিন্ন মামলায় আদালতে উপস্থিত হতে হচ্ছে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। তবে, নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য তিনি সম্প্রতি আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এমনকি ভার্চুয়ালিভাবে আদালতে উপস্থিত থাকার অনুমোদনের চেয়ে তিনি আবেদনও করেছেন। সর্বশেষ গতকাল অর্থাৎ, সোমবার দুটি মামলায় আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ইমরানের বিরুদ্ধে দুটি জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।