ইরানে বিক্ষোভকারী জনগণকে সমর্থন দিল হোয়াইট হাউস
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর এবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও ইরানে পেট্রলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউস স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এক বিবৃতি প্রকাশ করে ‘ইরান সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন’ জানায়। হোয়াইট হাউস বিবৃতিতে বলে, ‘যে সরকারের জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, তার বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রশক্তির প্রয়োগ ও যোগাযোগে কড়া বিধিনিষেধ আরোপের নিন্দা জানাই।’
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। তারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিয়েছে। জনগণকে পরিত্যাগ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত ও ধনসম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে শাসকগোষ্ঠী।’
ইরানে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে তেলের বর্ধিত মূল্য কার্যকর করা হয়। হঠাৎ করেই পেট্রলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্ষোভে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রাজধানী তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এ বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগে পেট্রলের ওপর ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকেই গত শুক্রবার পেট্রলের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এর আগে ইরান সরকারের সিদ্ধান্তবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এক টুইটার বার্তায় মাইক পম্পেও বলেন, ‘ইরানের জনগণের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন রয়েছে।’ ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইটের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি জানান, এ ধরনের প্রতারণামূলক সমর্থন কোনো অবস্থাতেই ইরানি জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভালোবাসা ও সমবেদনার নিদর্শন নয়।
এদিকে ইরান সরকারের দাবি, সুযোগসন্ধানী কিছু দুষ্কৃতকারী বিক্ষোভের নামে জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করার চেষ্টা চালায়। এ সম্পর্কে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, ‘পেট্রলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর কিছু মানুষকে রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে তাতে সবার সন্তুষ্ট না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কাজেই সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদের নামে কোনো ধরনের নাশকতা বরদাশত করা হবে না।’
রুহানি আরো বলেন, ‘সরকার আইন মেনেই যা করার করেছে... সরকারের তিন বিভাগের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ইরান সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার পেট্রল ১৫ হাজার রিয়াল দরে প্রতি মাসে মোট ৬০ লিটার পেট্রল কিনতে পারবেন মোটরযান মালিকরা। এর আগে এক ব্যক্তি প্রতি লিটার ১০ হাজার রিয়াল দরে মোট ২৫০ লিটার পেট্রল কিনতে পারতেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, পেট্রলে ভর্তুকি বাদ দিয়ে সরকার যে পরিমাণ অর্থ আয় করবে, তা দিয়ে নিম্ন আয়ের দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানিয়েছেন, ৭৫ শতাংশ ইরানি বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছে। পেট্রলে ভর্তুকি বাদ দেওয়ায় সরকার যে আয় করবে, তা ইরানের কোষাগারে জমা না রেখে জনগণকে সহায়তা করা হবে।