ইসরায়েলের হবু প্রধানমন্ত্রী কে এই নাফতালি বেনেট
নাম নাফতালি বেনেট। ইসরায়েলের সাবেক কমান্ডো এবং পরে প্রযুক্তি খাতের সফল ব্যবসায়ী। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটিয়ে সম্ভবত নাফতালি বেনেটই হতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ইসরায়েলের সম্ভাব্য এই নতুন নেতার পরিচয়।
রাজনৈতিক জীবনে যথেষ্ট আলোচিত উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত বেনেট। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা নিজেকে নেতানিয়াহুর চেয়েও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার উচ্চাভিলাষ বেনেটের অনেক আগে থেকেই। তবে যেভাবে তা পূরণ হতে যাচ্ছে, তা হয়ত তিনি নিজেও ভাবেননি। তার দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছে মাত্র ছয়টি আসনে। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বেনেটের দলের অবস্থান যৌথভাবে পঞ্চম। কিন্তু তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’। কারণ সরকার গড়তে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রধান দুটি পক্ষের কাছে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই জোট গঠনে বেনেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ- দুজনেই বেনেটকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন, সঙ্গে ছিল ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব। শেষ পর্যন্ত লাপিদের সঙ্গে থাকতেই মনস্থ করেছেন বেনেট। যদিও দুই নেতার আদর্শগত মতপার্থক্য রয়েছে।
শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী লাপিদের জোটের প্রধান শরিক নাফতালি বেনেট প্রথমে দুই বছরের জন্য জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। এরপর পালাবদল হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।
৪৯ বছর বয়সী বেনেটকে এক সময় নেতানিয়াহুর শিষ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এরপর দুজনের মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি থেকে পদত্যাগ করে বেনেট যোগ দেন ধর্মীয় কট্টরপন্থি দল জিয়ুশ হোম পার্টিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় সাফল্যে ভূমিকা রেখে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।
এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রতিটি জোট সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন বেনেট। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের ডানপন্থি জোট কোনো আসন জিততে ব্যর্থ হয়। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ইয়ামিনা দলের প্রধান হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দেন তিনি।
অতি কট্টরপন্থি হিসেবে চিহ্নিত বেনেট ইসরায়েলকে একটি ইহুদি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতেই বেশি উদ্যোগী। তিনি বিশ্বাস করেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি- যা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল দখল করে রেখেছে- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ইসরায়েলই ওই ভূখণ্ডের দাবিদার।
দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলে বসতি নির্মাণ কার্যক্রমে সমর্থন দিয়ে আসছেন (ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধানও ছিলেন বেনেট), যদিও তিনি বলেছেন, গাজার ওপর ইসরায়েলের কোনো দাবি নেই।
২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয় ইসরায়েল, এরপর থেকে পুরো উপত্যকা ঘিরে রেখেছে তারা।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নাফতালি বেনেট প্রায়ই বিদেশি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের আলোচনায় অংশ নেন এবং ইসরায়েলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই দেন।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন না বেনেট। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে তিনি কঠোর ভাষায় নাকচ করে থাকেন। বেনেট পুরোপুরি ইহুদি সংস্কৃতি মেনে চলেন এবং ইহুদিদের ধর্মীয় টুপি ‘কিপ্পা’ ব্যবহার করেন।
বিবিসি বলছে, রাজনীতিতে নামার আগে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বেনেটকে।