ওহাইও অঙ্গরাজ্যের এক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত, দাবি মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ, অর্থাৎ এক লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন অঙ্গরাজ্যটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. অ্যামি অ্যাকটন। এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য হিল এ খবর জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যামি অ্যাকটন বলেন, ‘আমাদের (ওহাইও অঙ্গরাজ্য) জনসংখ্যার অন্তত ১ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এখানে এক কোটি ১৭ লাখ মানুষ আছেন। এক শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় এক লাখের বেশি মানুষ। এটি আপনাদের ধারণা দেয়, কীভাবে এবং কত দ্রুত এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে।’
অ্যাকটন আরো বলেন, ‘এটি ধীরগতিতে শনাক্ত হওয়ার কারণে এর সংক্রমণ সম্পর্কে বুঝতেও আমাদের বিলম্ব হচ্ছে।’
এরই মধ্যে ধীরগতিতে করোনাভাইরাস শনাক্তের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের শীর্ষ কর্মকর্তা ড. অ্যান্থনি ফসি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ খুব সহজে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করাতে পারছে না, এটি একটি ‘ব্যর্থতা’।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৩৩৬ বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ও ঝুঁকি মোকাবিলায় ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেবিনেট বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘(আজ) শুক্রবার থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে, তবে যুক্তরাজ্য এই ঘোষণার বাইরে থাকবে।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘ইউরোপের দেশ এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে যতটা সম্ভব দ্রুতই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।’
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৬৭ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৮১ জন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, বিশ্বের ১২৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনে এর প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও ইউরোপের দেশ ইতালির অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১১৩ জনে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে সেখানে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, অফিস, ক্যাফে ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৯ জনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সেখানে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৮৬৯ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ৬৬ জন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্পেনে ৮৬ জন, ফ্রান্সে ৬১ ও জার্মানিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ জনে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে সবাইকে বাসায় থেকেই কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ভারতের কর্ণাটকে ৭৬ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ওই ব্যক্তির মৃত্যু হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর জানা গেছে। তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল।
গতকালই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ জনে। যাঁদের মধ্যে ভারতের কেরালা রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করেছে ভারত সরকারও। ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বে মন্ত্রীদের বৈঠকের পর জানানো হয়, ১৩ মার্চ (আন্তর্জাতিক সময়) রাত ১২টা থেকে স্থগিতাদেশ চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময় সব ধরনের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধাও স্থগিত থাকবে। তবে কূটনৈতিক, অফিশিয়াল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, চাকরি ও প্রকল্প ভিসা এই আদেশের বাইরে থাকবে।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ এবং ভারত-পাকিস্তানসহ অন্য ১২ দেশের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও ফ্লাইট স্থগিত করেছে সৌদি আরব।