ওয়াং ই’র মস্কো সফরে চীনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবি ম্লান
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সত্যিকার অর্থে লম্বা টেবিল পছন্দ করেন। তার বৈঠকের ছবিগুলো বেশ জনপ্রিয়, যেখানে দেখা যায় রুশ নেতা দূরত্ব বজায় রেখে টেবিলের একপ্রান্তে বসে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন। দুজনের দূরত্বটা একটু বেশিই বলে মনে হতে পারে। ফলে তারা একে-অন্যের কথা শুনতে নাও পারেন।
তবে চীনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াং ই’র সঙ্গে পুতিনের বৈঠকে এমন চিত্র ছিল না। সেখানে তারা হাত মেলানোর মতো দূরত্বেই বসেছিলেন অর্ধবৃত্তাকার আকৃতির টেবিলকে মাঝে রেখে।
যখন বৈঠকের ফুটেজ প্রকাশ করা হলো তখন মনে হতে পারে ইচ্ছাকৃতভাবেই এই প্রতীকি ব্যবস্থা করা হয়েছিল যেন মনে হয় পুতিন তার গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুর প্রতিনিধির সঙ্গে বসতে বেশ নিরাপদ বোধ করছিলেন।
এখন পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশাসন রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ের প্রথম সারির শত্রু হিসেবেই দেখে।
গত বছর প্রেসিডেন্ট পুতিন বেইজিং অলিম্পিক থেকে যখন দেশে ফিরে আসেন এবং চীনের সঙ্গে ‘সীমাহীন’ নতুন সম্পর্কের ঘোষণা দেন আর কয়েক সপ্তাহ পর যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে তখনও চীন সরকারকে বিচলিত মনে হয়নি।
ইউক্রেন বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে চীন খুবই দুর্বল পথে হাঁটছে। শি জিনপিং মনে করছেন তিনি আস্থার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তবে কেউ কেউ মনে করছেন চীনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবিকে তুলে ধরা কঠিন হয়ে যাচ্ছে আর এক্ষেত্রে তার পথ শেষ প্রান্তে এসে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়াং ই দাবি করেন ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখতে চীন ও রাশিয়া এক সঙ্গে কাজ করে যাবে।
ওয়াং ই যখন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা করেন তখন তিনি বলেন, ‘প্রিয় বন্ধু, পারস্পরিক স্বার্থ সংশিষ্ট বিষয় ও নতুন চুক্তির বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে মত বিনিময় করার জন্য প্রস্তুত আছি।’
এ সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে এই অশান্ত সময়ে তারা দুজন একে-অন্যের স্বার্থ রক্ষায় ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে কাজ করে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেইজিং ইতোমধ্যে রাশিয়ায় দুপক্ষের ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে আর এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান মেরামতের যন্ত্রপাতি। পক্ষান্তরে চীন ইউক্রেন আগ্রাসনের পর রাশিয়ার ওপর অবরোধের পরও সেখান থেকে তেল ও গ্যাস কিনছে।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠকের পর নিশ্চিত করেছেন যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং খুব শিগগিরই মস্কো সফর করবেন। আশা করা হচ্ছে আগামী দুমাসের মধ্যেই এই সফর হতে পারে।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন চীন যেন তার আওতার বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে কাজ না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে কেননা বাকী বিশ্ব চাইছে এশিয়ার এই বড় দেশটি এই যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে।