করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই গণকবর খুঁড়েছে ইরান
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি থেকে জানা যাচ্ছে, ইরানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যতটা ভয়াবহ, তা স্বীকার করছে না দেশটির কর্তৃপক্ষ। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ইরানের কোম শহরে গণকবরের অস্তিত্ব। আর তাতে ইরানে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার চিত্র প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলো সর্বপ্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। ছবিতে দেখা যায়, ইরানের পবিত্র কোম শহরের একটি কবরস্থানে গত (ফেব্রুয়ারি) মাসে নতুন করে মাটি খনন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১০০ গজ দৈর্ঘ্যের দুটি পরিখা খনন করা হয়েছে।
এসব চিত্র থেকে করোনাভাইরাসজনিত মহামারির ভয়াবহতা ধামাচাপা দিতে ইরান সরকারের চেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই কবরস্থানে খননকাজ চলাকালেই কোম শহর থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য করোনা নিয়ে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চরম মিথ্যাচারিতার বিষয়টি সামনে আনেন। ওই আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেন, ইরানে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অন্তত অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন দাবি করেছিল, করোনায় ইরানে ১২ জন মারা গেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে কোমের ওই আইনপ্রণেতার অভিযোগ ‘বেমালুম অস্বীকার করেন’ ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরকি। সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, তিনি ঘামছিলেন, কাশছিলেন। পরদিন ইরাজ হারিরকি জানান, তিনি করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
ওই ঘটনার পর ইরানের পার্লামেন্ট ‘মজলিস’-এর দুই সদস্য—একজন সাবেক কূটনীতিক ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা—করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার জানা গেছে, খানেনির আরেক উপদেষ্টা ও ইরানের পররাষ্ট্রবিষয়ক কৌশলের সবচেয়ে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর আলি আকবর বেলায়েতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বয়সের কারণে ইরানের শীর্ষ অনেক কর্মকর্তাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজারের বেশি ইরানি করোনায় আক্রান্ত। আর ভাইরাসের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৯ জন।
ইরানের কলেরা মহামারি নিয়ে লেখালেখির অভিজ্ঞতা রয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমির আফখামির। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা (ইরানি কর্তৃপক্ষ) যে গণকবর খুঁড়ে (করোনাজনিত) রোগের প্রকোপের ব্যাপকতার বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করছে, তাতে আমি বিস্মিত নই।’
অধ্যাপক আমির আফখামি বলেন, চীনের সঙ্গে নিবিড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সে সম্পর্কে আঁচড় না ফেলার ভয়ই ইরানে এত দ্রুত ও ব্যাপকভাবে করোনা ছড়ানোর অন্যতম কারণ।
অধ্যাপক আফখামি বলেন, ‘যেহেতু ইরানের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীন, তাই চীন থেকে ইরানে আগতদের পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি ইরান সরকার।’
‘পরবর্তী সময়ে ভাইরাসটি মোকাবিলায় তেহরানের স্বচ্ছ পদক্ষেপের অভাব এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ায় রসদ জুগিয়েছে,’ যোগ করেন অধ্যাপক আফখামি।