করোনায় বিশ্বে মৃত বেড়ে ৪৬১৯, বিপর্যস্ত ইউরোপ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬১৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯ জন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৮ হাজার ৮৬ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে দিন যত যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছাড়িয়ে স্বস্তিতে ফিরছে চীন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চীনে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১৫ জন। এ ছাড়া একদিনে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। তাঁরা সবাই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। এর মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা কমে যাওয়ায় করোনার উৎপত্তিস্থল উহান শহরের সব অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার।
এরই মধ্যে বিশ্বের সব মহাদেশের ১২০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১১৮ জনে। নিউইয়র্কে কোয়ারেন্টাইন করা বাড়িঘরে খাদ্য পৌঁছে দিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
করোনা ঝুঁকি মোকাবিলায় ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের পর্যটন ভিসা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছে ভারত। এদিকে, ইরানের কারাগারে থাকা মার্কিনিদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
ইউরোপের দেশগুলোতেও ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ১৯৬ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১২ হাজার ৪৬২ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, ফ্রান্সে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ২৮১, স্পেনে দুই হাজার ২৭৭, জার্মানিতে এক হাজার ৯৬৬, সুইজারল্যান্ডে ৬৪২, নরওয়েতে ৫৯৬, ডেনমার্কে ৫১৬, নেদারল্যান্ডসে ৫০৩, যুক্তরাজ্যে ৪৫৬ ও বেলজিয়ামে ৩১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ইতালির পর জার্মানিতে ৭০ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমণের শিকার হতে পারেন—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, ‘ইতালির পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ব্যথিত। জার্মান কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।’
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, চিলি, পেরু, পানামা, মেক্সিকোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এর আগে আর্জেন্টিনায় একজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
অস্ট্রেলিয়ায়ও বেড়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এর মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট স্কট মরিসন।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, প্রায় আট হাজার। এ ছাড়া মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে সরকারি হিসাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৪ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজারের বেশি।
আফ্রিকা মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ঘানা ও গ্যাবনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মরক্কোয় করোনাভাইরাসে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ডিআর কঙ্গো আর রুয়ান্ডায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, জিম্বাবুয়েতে কোরারেন্টাইন থেকে পালিয়ে গেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি। নাইজেরিয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাড়ে পাঁচ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মিসরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। কেনিয়ায় বাতিল করা হয়েছে কয়েকটি সম্মেলন। ক্যামেরুন, টোগো, সেনেগাল, তিউনিসিয়া ও আলজেরিয়াতে কয়েকজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে আফ্রিকা সফর বাতিল করেছেন টুইটারের নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডরসি।