করোনা ল্যাবে তৈরি কি না তদন্ত চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বাগড়া
মহামারি নভেল করোনাভাইরাস চীনের ল্যাবে তৈরি কি না, তা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো তৎপরতা অনুমোদন করবে না চীন।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক কারসাজি ও ভুক্তভোগীর ওপর দায়ভার চাপানো’র অভিযোগ তুলেছে। চীনের উহান শহরের একটি গবেষণাগারের সঙ্গে কোভিড-১৯-এর উৎপত্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত বুধবার জো বাইডেন বলেন, শিগগিরই ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আশা করছেন তিনি। বৃহস্পতিবারও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, তিনি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে যাচ্ছেন।
ভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের তৎপরতাকে সমর্থন জানিয়ে বাইডেনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও।
বাইডেনের তদন্ত প্রতিবেদনের কথায় চটেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সত্য ও তথ্যে বিশ্বাস করে না। যেখানে কয়েক পর্বের বিজ্ঞানভিত্তিক মৌলিক গবেষণা রয়েছে, এসবে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।’
ঝাও লিজিয়ান আরও বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহামারিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক কারসাজি ও দায় চাপানো। তারা বিজ্ঞানের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভাইরাস প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় পশ্চাৎমুখী।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ‘অন্ধকার ইতিহাস’ রয়েছে বলেও দাবি করেন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের চীন দূতাবাস সরাসরি বাইডেনের কথা উল্লেখ না করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ধোঁয়াশার প্রচারণা আর দায় চাপানোর কার্যক্রম ফিরে এসেছে।’
অন্যদিকে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে এ বছরের শুরুতে চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, কোভিড-১৯ ল্যাব থেকে উৎপত্তি হয়েছে, এমন আশঙ্কা একেবারে নেই বললেই চলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভবত প্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। তবে এ ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘শুরুর দিকের শনাক্ত, পশু বাজারের কার্যক্রম, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ল্যাবে তৈরির ধারণাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিকিৎসা বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফসি এর আগে বলে আসছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, প্রাণী থেকেই মানবদেহে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। কিন্তু এ মাসে তিনি জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন কি না, সে ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিষয়ক মন্ত্রী জাভিয়ের বেসেরা সম্প্রতি ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে ডব্লিউএইচওকে স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিতের আহ্বান জানানোর পরই বাইডেনের এ সংক্রান্ত ঘোষণা এল।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের শেষদিকে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ কোটি ৯৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানেও প্রায় দেড় কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত রয়েছে।
উহানের ল্যাব থেকেই কোভিড-১৯ ভাইরাসের জন্ম কি না, তা নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা হয়ে আসছে। প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন। বর্তমান ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদনের কথা বলে বিষয়টি সামনে আনলেন।