কর্মীদের সময় মতো বাড়ি যেতে বাধ্য করছে ভারতীয় যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
তানভি খান্ডেলাল এর বয়স ২১ বছর। কাজ করেন ভারতের ইন্দোরের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। দিনের অফিস সময়ের অন্তিম মুহূর্তে রয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে তার কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে এলো এক বার্তা। সেখানে লেখা, আপনার শিফট শেষ। অফিস সিস্টেম ১০ মিনিটের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। দয়া করে বাড়ি ফিরে যান।
বেশ কিছুদিন আগে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগে যোগ দিয়েছেন তানভি। প্রথমে কম্পিউটারের স্ক্রিনের বিষয়টি নিয়ে বেশ অবাক হন এই নারী। তবে, দিন যেতেই তিনি বিষয়টি বুঝে ফেলেন। এমনকি নতুন কর্মীদের কম্পিউটারেও তিনি পপ আপ ম্যাসেজটি সেট করে দেন।
তানভি বাদেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করেন ৪০ ব্যক্তি। এটির নাম সফটগ্রিড কম্পিউটারস। মূলত কর্মীদের বাড়িতে সময় মতো পৌঁছানো ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি থেকে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
সফটগ্রিড কম্পিউটারে একটি মাত্র শিফট চালু রয়েছে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিফটটি শেষ হয়। শিফট শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে অর্থাৎ ৬টা ৫০ মিনিটে পপ আপ ম্যাসেজটি সব কর্মীর কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আর ঘড়ির কাঁটা সাতটা গেলেই কম্পিউটারগুলো একাই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির সিইও সেওতা শুকলা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতাও তিনি। এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, পপ আপ ম্যাসেজটি কর্মীদের একটি ভালো কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য করা।
সেওতা শুকলা আরও বলেন, মহামারির সময় আমাদের কাজের দিনগুলো নিজেদের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। আমাদের দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় যাপনে সময় বের করতে আমাদের কষ্ট করতে হতো। এরপরেই আমরা একটি সফটওয়ার তৈরি করি, যেখানে কর্ম ঘণ্টা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে আমাদের ম্যাসেজ আসবে।
সফটগ্রিড কম্পিউটারসের এই অংশীদার বলেন, ছয় মাস আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারগুলোতে সফটওয়ারটি ইন্সটল করা হয়। কর্মীদের বিস্মিত করতে এক ছুটির দিনে আমরা এটি ইন্সটল করি। যখন পপ আপ ম্যাসেজটি সবার স্ক্রিনে আসে, সবাই ভেবেছিল এটি মজা করে করা হচ্ছে। অনেকে ভাবে আমরা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছি।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের ভাষ্য, পপ আপ ম্যাসেজটি তাদের বাড়ি যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তানভি বলেন, আমার আগের অফিস থেকে বর্তমানেরটি অনেক ভিন্ন। ওই অফিসে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াকে ভ্রান্ত ধারণা বলা হতো। এমনকি কর্মীদের অতিরিক্ত সময়ে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হতো।
সপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিঙ্কেডিনে একটি ছবি পোস্ট করে তানভি লেখেন, যদি কেউ এই ধরনের সংস্কৃতিতে কাজ করে তবে মেজাজ ঠিক করতে আপনার সোমবারের প্রেরণা বা শুক্রবারের মজার প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে তানভির পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটিতে লাইক পড়েছে চার লাখেরও বেশি। কমেন্ট পড়েছে সাত হাজার।