ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ‘হলিউড-স্টাইলে’ ভিডিও উত্তর কোরিয়ার
উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি দেশটির বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। সে খবর বিশ্বের গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে খবরটি যেভাবে প্রচার হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল উঠেছে। খবর বিবিসির।
পরনে চামড়ার জ্যাকেট, চোখে কালো রোদচশমা, পেছনে বিশালাকার ক্ষেপণাস্ত্র, হেঁটে আসছেন পাশে দুই সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে—হলিউড-স্টাইলে স্লো-মোশনে এভাবেই শুক্রবার টিভি পর্দায় দেখা গেছে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষনেতা কিম জং উনকে।
না, সিনেমায় নামেননি কিম জং উন। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখলে, যে কারও মনে প্রথমে সিনেমার কথাই মনে হবে।
ওই ভিডিওটি ছিল আসলে উত্তর কোরিয়ার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-আইসিবিএম উৎক্ষেপণের ঘোষণা। ২০১৭ সালের পর আরও একটি আইসিবিএম পরীক্ষা করল উত্তর কোরিয়া। আর, সে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ভিডিও বানানো হয়েছে রীতিমতো হলিউডি সিনেমার স্টাইলে।
কী দেখা যাচ্ছে ওই ভিডিওতে?
‘স্লো মোশনে’ হেঁটে আসছেন কিম জং উন। তাঁর দুপাশে দুই সেনা কর্মকর্তা। আর, তাঁদের পেছনে রয়েছে বিশালাকার ‘হোয়াসং-১৭’ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র।
এরপর ফিল্মি ধাঁচে আবহ সংগীতের সঙ্গে দুই সেনা কর্মকর্তা ও কিম জং উনকে তাঁদের ঘড়ি দেখতে দেখা যায়। এরপর আবারও ‘স্লো মোশন’; কিম জং উন তাঁর রোদচশমা খুলে মৃদু মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। আর, সেনারা দৈত্যাকার ক্ষেপণাস্ত্রটিকে পরীক্ষাস্থলে নিতে শুরু করেন।
এরপর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ পর্যন্ত এক নাটকীয় ক্ষণগণনার দৃশ্যের অবতারণা। একসময় উত্তর কোরীয় সেনারা মাতৃভাষায় চিৎকার করে ওঠেন। এরপর উৎক্ষেপণের জন্য বোতামে চাপ দেওয়া হলে সফলভাবে উড়ে যায় ‘হোয়াসং-১৭’ ক্ষেপণাস্ত্র। তারপর উত্তর কোরীয় সেনা থেকে কর্মকর্তা ও কিম জং উনকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
উত্তর কোরিয়ার ফিল্মি কায়দায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ভিডিও একদিকে যেমন ভাইরাল হয়েছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ নিয়ে চলছে মিম-ঝড়।
তবে, সামরিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন—উত্তর কোরিয়ার এ ভিডিওকে ভিন্নভাবে দেখতে হবে। তাঁরা মনে করছেন, ভিডিওটির ধরন বলছে—উত্তর কোরিয়ার নিজেদের সামরিক সক্ষমতার প্রতি আস্থা বাড়ছে। তারা নিজেদের সামরিক শক্তির ওপর এত আস্থাশীল যে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনাকে সিনেমার দৃশ্যে রূপান্তর করতেও এখন দ্বিধা করছে না।
অবশ্য, উত্তর কোরীয় নেতাদের চলচ্চিত্রের প্রতি ঝোঁকের ইতিহাস নতুন নয়। কিম জং উনের বাবা উত্তর কোরিয়ার সাবেক শীর্ষনেতা কিম জং ইল পাঁড় সিনেমাপ্রেমী ছিলেন। কিম জং ইল ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একজন অভিনেত্রী এবং একজন চলচ্চিত্র পরিচালককে অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিনেত্রী ও পরিচালকের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার সিনেমা শিল্পের বিকাশ ঘটানো ছিল কিম জং ইলের লক্ষ্য।
এদিকে, কিম জং উনের সাম্প্রতিক ফিল্মি ভিডিওর আড়ালে ‘হোয়াসং-১৭’ ক্ষেপণাস্ত্রের যে পরীক্ষা করা হলো, সে দিকে নজর রাখা দরকার বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। ‘হোয়াসং-১৭’ ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০২০ সালের অক্টোবরে সর্বপ্রথম সামনে আনা হয়। সে সময় সামরিক বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, ভয়ংকর শক্তিশালী এ ক্ষেপণাস্ত্র। তবে, কিম জং উন দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যাতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নিতে পারে, সেজন্যই ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে।