গুরুতর আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ফাইজারের কোভিড পিল ৮৯ শতাংশ কার্যকর
কোভিড চিকিৎসার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি পিল বা বড়ি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় চলে যাওয়া বয়স্কদের মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে ৮৯ শতাংশ কার্যকরী বলে প্রমাণ মিলেছে। ‘প্যাক্সলোভিড’ নামের ক্ষুদ্রাকৃতির পিলটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এমন কার্যকারিতা দেখিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ফাইজার গতকাল শুক্রবার তাদের কোভিড পিলের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য জানিয়েছে। প্রতিদিন দুই বারে তিনটি করে পিল টানা পাঁচদিন খাওয়ানো হয়েছে ট্রায়ালে। ভালো ফলাফল আসায় ট্রায়াল শেষ না করেই, তা স্থগিত রেখেছে বলে জানিয়েছে ফাইজার।
যা তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো মার্কিন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোতে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন ফাইজারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালবার্ট বৌরলা। তিনি বলেছেন, ‘পিলটি রোগীদের জীবন বাঁচাতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে এবং ১০ জনের মধ্যে নয় জনের হাসপাতালে ভর্তি ঠেকিয়ে দিতে সহায়তা করতে সক্ষম।’
উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরই রোগীকে ফাইজারের ‘প্যাক্সলোভিড’ খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে।
ভাইরাসের বৃদ্ধির জন্য যে এনজাইম দরকার পড়ে, তা আটকে দেয় ফাইজারের পিল। এ কারণে একে প্রোটিজ ইনহিবিটর বলা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপর ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মার্ক সার্প অ্যান্ড ডোমের (এমএসডি) একই ধরনের ট্যাবলেটের অনুমোদন দেওয়ার পরদিনই ফাইজার তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য জানাল।
যুক্তরাজ্য ফাইজারের অনুমোদন না পাওয়া এই প্যাক্সলোভিডের আড়াই লাখ কোর্স এবং এমএসডি’র তৈরি মলনুপিরাভির ট্যাবলেটের চার লাখ ৮০ হাজার কোর্সের ক্রয়াদেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছেন, তাঁর দেশ এরই মধ্যে লাখ লাখ কোভিড ট্যাবলেট মজুদ করেছে।
ট্রায়ালের ফলাফল
উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এক হাজার ২১৯ জন কোভিড রোগীকে ‘প্যাক্সলোভিড’ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। অন্যদিকে, একই অবস্থায় থাকা যেসব কোভিড রোগীদের ডামি পিল খাওয়ানো হয়েছিল, তাঁদের সাত শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
ট্রায়ালে কোভিড উপসর্গ দেখা দেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই রোগীদের পিল খাওয়ানো শুরু করা হয়েছে।
ডামি পিল খাওয়ানো রোগীদের সাত জন করোনায় মারা গেছেন। কিন্তু, আসল পিল খাওয়ানো রোগীদের কেউ মারা যাননি।
এ ছাড়া উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে প্যাক্সলোভিডের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা রোগীদের এক শতাংশকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। তবে, তাঁদের মধ্যে কেউ মারা যাননি। আর ডামি পিল খাওয়ানোদের ৬ দশমিক ৭ শতাংশকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে, ফাইজার কম ঝুঁকিপূর্ণ কোভিড রোগীদের বেলায় তাদের ট্যাবলেটের কার্যকারিতা নিয়েও গবেষণা করছে।
যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্টিফেন গ্রিফিন বলেন, ‘অ্যান্টিভাইরালের এসব সাফল্য সার্স-কোভ২-এর আক্রমণ প্রতিরোধে নতুন যুগের সূচনা করবে। গুরুতর অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীদের জন্য এটি ব্যাপক উপকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।’