ঘোমটা, জিন্স কিংবা হিজাব—এটা নারীর অধিকার : প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য। স্কুল বা কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে আসার বিরোধিতা করে গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে একদল শিক্ষার্থী ও তরুণকে। এ হিজাব ইস্যুতে আজ বুধবার মুখ খুলেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়—কিছুদিন আগে কর্ণাটকের উদুপি জেলায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। এরপর অন্য কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই রকমের নির্দেশিকা প্রকাশ হওয়ার কারণে বিতর্ক আরও বাড়ে। পানি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অভিযোগ—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদদ রয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে ভালো ফল করতে পারেনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তাই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাস্তা বেছে নিয়েছে বিজেপি—এমন অভিযোগ বিরোধীদের।
এবার হিজাব ইস্যুকে কেন্দ্র করে আজ টুইট করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা বলেছেন—নারীর নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরার অধিকার রয়েছে। এটা তার সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। ইচ্ছা হলে একজন নারী বিকিনি, জিন্স, ঘোমটা কিংবা হিজাব—যা খুশি পরতে পারেন।
প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘হোক তা বিকিনি, ঘোমটা, জিন্স কিংবা হিজাব, একজন নারী কী পরতে চান, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁর। ভারতীয় সংবিধান এ অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। নারীর প্রতি নিপীড়ন বন্ধ হোক।’
সেইসঙ্গে হ্যাশট্যাগে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন—‘লাড়কি হুঁ, লড় সাকতি হুঁ’ (আমি নারী, লড়তে জানি)।
এদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এমন টুইট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারণ, সামনেই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সে নির্বাচনে নারীদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে “লাড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ” স্লোগান দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
এদিকে, হিজাবকাণ্ড ক্রমে কর্ণাটকের পাশাপাশি ভারতের জাতীয় রাজনীতিরও অংশ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন স্থানে পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। হিজাব নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। আপাতত কর্ণাটক হাইকোর্ট শুনানি স্থগিত করেছে। মুসলিম ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ভারতীয় সংবিধানের ১৫ ও ২৪ ধারার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, হিজাবে নিষেধাজ্ঞা জারি মৌলিক অধিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ।
এ ছাড়া কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাড়া পড়েছে। হিজাব বিতর্ক নিয়ে সরব হয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং নারী অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই।
শিক্ষা অথবা হিজাব, যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার শর্তকে ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যা দেন নারী শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করা মালালা ইউসুফজাই।
মঙ্গলবার রাতে করা টু্ইটে ভারতে মুসলিম নারীদের কোণঠাসা করার নীতি বন্ধে দেশটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মালালা।