জন্মহার বাড়াতে চীনে দেওয়া হচ্ছে অনুদান
জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আসন থেকে ছিটকে পড়েছে চীন। এই আসনে বর্তমানে রয়েছে ভারত। তবে, জনসংখ্যা বাড়াতে ইতোমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছে চীন। দেশটির স্থানীয় নেতাদের জন্মহার বাড়ানোর জন্য ‘সাহসী’ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেইজিংয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এই হার বাড়াতে বিভিন্ন অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। খবর রয়টার্সের।
প্রতিবেদনে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ সংস্থাটি জানায়, শিশু জন্ম ও তার লালন-পালনে পরিবারের ব্যয় কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়েছেন চীনের জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণ ও ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান। এতে করে জন্মহার বাড়বে বলে দাবি ওই কর্মকর্তার। শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের জনসংখ্যা পর্যবেক্ষণ ও ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট বিভাগ দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। ওই বিভাগের প্রধান ইয়াং ওয়েনজুহাং জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সাহসী পদক্ষেপ নিতে বলেছেন বলে ওই সংবাদপত্রটি বলেছে।
ইয়াং বলেছেন, ‘অর্থ ও ক্যারিয়ারের উদ্বেগের জন্যই নারীরা গর্ভধারণ করছে না। তাদের গর্ভধারণে ইচ্ছুক করতে বেশ কিছু পলিসির পরিবর্তন করতে হবে।’
বেইজিংয়ের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জনসংখ্যার দীর্ঘমেয়াদী ভারসাম্য রাখতে স্থানীয় সরকারগুলোকে কাজ করতে হবে। শিশু জন্ম, শিশু যত্ন ও শিক্ষার খরচ কমাতে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রয়টার্স বলছে, ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমেছে। গত মাসেই এই পরিসংখ্যানটি প্রকাশিত হয়। এটিকে চীনের ঐতিহাসিক মোড় বলে উল্লেখ করা হয়।
চীনে বয়স্ক ব্যক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার শঙ্কা করছে জনসংখ্যাবিদরা। তাদের মতে, বৃদ্ধদের চিকিৎসা ও বিভিন্ন কল্যাণকর কাজের জন্য সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এতে করে সরকারিভাবে ঋণ বাড়বে। ধনী দেশের তালিকায় যাওয়ার আগেই চীন বুড়োদের দেশ হয়ে যাবে।
ঊনবিংশ শতাব্দী শেষদিক থেকে চীন জনসংখ্যা কমানোর জন্য তোড়জোড় চালায়। ১৯৮০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩৫ বছরে চীন এক সন্তান পলিসিতে থাকে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে আশঙ্কাজনক হারে জনসংখ্যা কমছে। এতে করে কর্মক্ষম মানুষ কমবে ও এর প্রভাবে বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে এশিয়ার দেশটি।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এনবিএসের তথ্য মতে, ২০২২ সাল শেষে দেশটির জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। ২০২১ সালের তুলনায় আট লাখ ৫০ হাজার কম। ৯৫ লাখ ৬০ হাজার জন্মের বিপরীতে মারা গেছে প্রায় এক কোটি চার লাখ মানুষ। দেশটিতে গত বছর জন্মহার ছিল ছয় দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল সাত দশমিক ৫২ শতাংশ।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১০ কোটি ৯০ লাখে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের অনুমানের থেকে তিনগুণ।
এদিকে, সিচুয়ার প্রদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবিবাহিত জুটিদের সন্তান লালন-পালনের সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথাও জানিয়েছে। একই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে বিভিন্ন প্রদেশের স্থানীয় সরকারও। শানক্সি প্রদেশের কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে স্প্যাম ডোনারদের ৭৩৫ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।