টিকাদান কার্যক্রমের গতি বাড়াতে চায় চীন, কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ
শুরুতে গতি শ্লথ থাকলেও নভেল করোনাভাইরাসের টিকাদানের হার দ্রুত বাড়াতে চায় চীন। তবে টিকার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিয়ে দেশটির জনমনে সন্দেহ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দিয়েছে চীন। এই হার দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। তবে, চীনের লক্ষ্যের তুলনায় এই হার বেশ কম। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুনের মধ্যে ৫৬ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে, যা দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ।
টিকাদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শহর ও প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের নিয়ম অনুসরণ করছে। কোথাও টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও শিক্ষকদের দিয়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, আবার কোথাও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্যতামূলকভাবে কর্মীদের টিকার আওতায় আনছে। এমন ক্ষেত্রে কোনো কর্মী টিকা দিতে না চাইলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানের টিকা দেওয়া হচ্ছে সেটিও টিকাগ্রহীতাকে বলা হচ্ছে না বলে কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত লি নামের এক নারী জানান, বিশেষ শারীরিক অবস্থা ছাড়া টিকা নেওয়া থেকে তারা ছাড় পাচ্ছেন না। তিনি জানান, কিছু বেসরকারি কোম্পানি টিকা না নিলে তাদের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছে। ‘বেশির ভাগ মানুষ চীনের টিকা এড়াতে চাইলেও তাদের সামনে সে সুযোগ নেই, কেননা সরকারের চাপ সামলানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়,’ বলেন লি।
এদিকে উহান শহরে গত কয়েক সপ্তাহে মানুষ লাইন ধরে টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় টিকা নিয়েছেন। কিন্তু, টিকা সংক্রান্ত তথ্য কঠোরভাবে গোপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লিন নামে এক ব্যক্তি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অনেকে জানেন যে চীনের টিকা কিছু দেশ গ্রহণ করেছে, কিন্তু তাঁরা কেউ জানেন না টিকা কার্যক্রম শুরুর পর তা সংক্রমণ ঠেকাতে কতটা কার্যকার হয়েছে। উহানে সবাই সিনোফার্মের টিকা নিচ্ছে, তবে প্রতিবেশী শহরগুলোর কোনো কোনোটিতে সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
টিকার কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ আছে। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক গাও ফু বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে টিকার কার্যকারিতার হার বৃদ্ধির জন্য তাঁরা কাজ করছেন। এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে বিভিন্ন টিকার মধ্যে মিশ্রণ ঘটানো। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে গাও ফু বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে।
এদিকে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়াতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। গাও ফুর বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ চীন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আওতা বৃদ্ধি নয় বরং টিকার কার্যকারিতা কতটা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিসি, আউটকামস অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক জ্যাসন ওয়াং মনে করেন, এক্ষেত্রে একবার সীমান্ত উন্মুক্ত হলে বাইরে থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে আবারও নাগরিকেরা সংক্রমিত হতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।