টিকা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ও করোনার সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ে বিপাকে ইউরোপ
জার্মানি, বেলজিয়াম ও বুলগেরিয়াসহ ইউরোপের জোটভুক্ত দেশগুলো নভেল করোনাভাইরাসের টিকা স্বল্পতায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে। এদিকে, নতুন করে করোনার সংক্রমণও বাড়তে শুরু করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি জানানো হয়।
এ পর্যন্ত ২৬০ কোটি ডোজ টিকার চুক্তি হলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ টিকা পেতে ব্যর্থ হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোটভুক্ত দেশগুলো। ফলে টিকাদানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর থেকে পেছনে পড়ে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।
এদিকে, ইতালি ও জার্মানিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে বলে জানিয়েছে দেশ দুটির কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি এবং জার্মানির প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠান রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস এমনটি জানায়।
ইতালিতে সোমবার থেকে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে এবং আগামী ৪ এপ্রিল ইস্টার সানডের দিন দেশজুড়ে লকডাউন জারি থাকবে।
ইইউ এ পর্যন্ত মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং ফাইজার-বায়োএনটেক, এই চারটি করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সাশ্রয়ী হওয়ায় এদের ওপর নির্ভরশীলতাকে টিকা পেতে দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে।
চুক্তি মতে, এ মাসের শেষ নাগাদ অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ইউরোপীয় কমিশনের। কিন্তু চার কোটি ডোজ সরবরাহ করতেই হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি।
সবগুলো কোম্পানি মিলিয়ে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ৩০ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে ইউরোপীয় কমিশনের। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা জানতে চেয়েছেন, ইউরোপ জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্য কীভাবে তাদের টিকা পাচ্ছে, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন পর্যাপ্ত টিকার ডেলিভারি পাচ্ছে না।
আগামী সেপ্টেম্বরে জার্মানির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এবার ভোটে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের দল সিডিইউ বেশ বিপদেই পড়তে যাচ্ছে। বিরোধীদল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বলছে, নিজেদের জন্য টিকা কেনার ক্ষমতা ইউরোপীয় কমিশনের হাতে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।
মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশ করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে গর্ব করেছিল, তারা এখন বেশ বেকায়দায় রয়েছে। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে নতুন করে ব্যাপকমাত্রায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা অনুপাতে প্রায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড মিলেছে চেক রিপাবলিক এবং প্রতিবেশি দেশ স্লোভাকিয়ায়।
এ ছাড়াও ইউরোপীয় কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘টিকার সুষম বণ্টন করছে না ইউরোপীয় কমিশন।’
কয়েক সপ্তাহ আগে চুক্তি অনুযায়ী করোনা টিকার ডেলিভারি না আনতে পারায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন পদত্যাগ করছেন এমন কথাবার্তাও শোনা যায়।