দ.কোরিয়ায় কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরামর্শ মার্কিন উপদেষ্টার
উত্তর কোরিয়া হামলা চালাতে পারে, এমন দুশ্চিন্তায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এর জেরে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে সিউল, এমন খবরও চাওর হচ্ছে। সিউলকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ওয়াশিংটনকে সিউলে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ফের মোতায়েনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জন বোল্টন। আজ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
আজ বোল্টন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত, দক্ষিণ কোরিয়ায় ফের কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা। এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার কাছে একটি কঠোর বার্তা পৌঁছে যাবে। এমনকি, সিউলও পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে পিছিয়ে যাবে।’
বোল্টনের এই মন্তব্য এমন সময় এলো যখন কি না ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনাও করবেন তিনি। আশা করা হচ্ছে, আলোচনায় প্রাধান্য পাবে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে কীভাবে মিত্র দেশগুলোকে সুরক্ষা দেবে ওয়াশিংটন।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম এমন পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ঝুঁকছে উত্তর কোরিয়া। এমনকি, দেশটি তাদের পদক্ষেপ নিখুঁত করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন ইওল, কারণ নিরাপত্তার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর দক্ষিণ কোরিয়া। ইওলের রাজনৈতিক দলের কিছু জ্যৈষ্ঠ সদস্য ইতোমধ্যে সিউলকে তার নিজস্ব পরমাণু কর্মসূচি চালুর আহ্বান জানিয়েছেন।
বোল্টনের মতে, সিউলে ওয়াশিংটনের ফের কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন এই সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে পিয়ংইয়ংকে সতর্ক করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘উপদ্বীপে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ফিরে যাওয়া উত্তর কোরিয়াকে রোধের জন্য আমাদের সংকল্প ও দৃঢ়তার স্পষ্ট প্রমাণ হবে। কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন দক্ষিণ কোরিয়াকে তার নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখবে না। তবে, এটি কিছু সময় দিবে, সিউল কি সত্যিই পরমাণু কর্মসূচিতে যাবে কিনা তার জন্য।’
১৯৫৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ১৯৯১ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। যদিও বর্তমানে দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে অনেক মার্কিনি সৈন্য। সিউলের নিরাপত্তার জন্যই তারা সেখানে রয়েছেন। আর মিত্রদের রক্ষার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওয়াশিংটন।
গত বছরের মে-তে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন ইওল। নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় ইওল বলেছিলেন, যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হবে। তবে, ইওলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত নভেম্বরে বলেছিলেন, তারা এরকম কোনো পদক্ষেপে যাবে না।
গত সপ্তাহে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইওল বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা এনপিটি চুক্তি লঙ্ঘন করে।’ তবে, নিজেদের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত প্রতিরোধ চাচ্ছে তারা।
বোল্টন বলেন, ‘সিউলের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে কিনা এ নিয়ে তাদের দ্বিধা রয়েছে। তবে, তারা যদি পরমাণু কর্মসূচিতে ফিরে যায় তাহলে বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র কমানোর ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। অঞ্চলটিতে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতার সূত্রপাত করবে।’