নির্বাচনি প্রচার বন্ধ রেখে বিয়ে সারলেন লুলা দা সিলভা
আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা গতকাল বুধবার বিয়ে করেছেন—পাত্রী লুলার দল ওয়াকার্স’ পার্টির সদস্য ও সহকর্মী সমাজবিজ্ঞানী রোসাঞ্জেলা দা সিলভা। বিয়ের জন্য নিজের নির্বাচনি প্রচারণা বন্ধ রাখেন লুলা।
লুলা দা সিলভা গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন। ওই ছবি দেখে মনে হচ্ছে—লুলা দা সিলভা রোসাঞ্জেলার অনামিকায় বিয়ের আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে সংবাদ সংস্থা বাসস এ খবর জানিয়েছে।
ছিয়াত্তর বছর বয়সি লুলা দা সিলভা এবং ৫৫ বছর বয়সি রোসাঞ্জেলা দা সিলভা গতকাল সন্ধ্যায় সাও পাওলোর ব্রুকলিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের সদস্য, রাজনীতিক, শিল্পীসহ ২০০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে বেশে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। অনুষ্ঠানের ঠিকানা এক দিন আগে অতিথিদের জানানো হয়।
এ ছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর—বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রবেশের আগে অতিথিদের তাঁদের মোবাইল ফোন একটি কক্ষে রেখে আসতে হয়।
এদিকে, বিয়ের অনুষ্ঠানের আগেই বিয়ে নিয়ে উৎসব, বাজেট ও খাবার তালিকা নিয়ে অনলাইনে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। লুলার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণের জন্য এসব গুজব তাঁর প্রতিপক্ষ বর্তমান প্রেসিডেন্ট কট্টর ডানপন্থি জাইর বলসোনারোর সমর্থকেরা প্রচার করেছে বলে দাবি করেন লুলা। যদিও দুর্নীতির এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন লুলা দা সিলভা।
লুলার বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ, সাও পাওলোর সাবেক গর্ভনর ও লুলার ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেরাল্ডো অ্যালকমিন, গায়ক গিলবার্তো গিলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা দা সিলভা। বিয়ের দিন লুলার পক্ককেশ আগের চেয়ে কিছু বেড়েছে বলে মনে হলেও নিজেকে প্রাণোচ্ছ্বল প্রমাণে কমতি রাখেননি তিনি। বাগদত্তাকে ডাকনামে (জানজা) সম্বোধন করে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকাশ করছিলেন লুলা। সেইসঙ্গে যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন—লাতিন আমেরিকার সর্ববৃহৎ অর্থনীতির নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর এখনও আছে।
এ দম্পতির চুম্বন ও আলিঙ্গনের ছবি নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছিল। এর মধ্যে গত বছরের আগস্টে স্পিডো-স্টাইলের সাঁতারের পোশাক পরে প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে আকর্ণবিস্তৃত হাসির ছবি পোস্ট করে জাতীয় আলোচনায় উঠে আসেন লুলা দা সিলভা।
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনকে লুলা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি প্রেমে পড়েছি; মনে হচ্ছে আমার বয়স সবে কুড়ি।’
লুলা আরও বলেন, ‘আমার মতো খুশি একজন মানুষের রাগ হতে নেই—প্রতিপক্ষকে যা খুশি করতে দিন... (নির্বাচনি) প্রচারণায়, যদি সম্ভব হয়, আমি কেবল ভালোবাসা নিয়েই কথা বলব। আমি মনে করি, অন্তরে রাগ পুষে রেখে আপনি একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।’
এটি লুলার তৃতীয় বিয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী ১৯৭১ সালে বিয়ের দুই বছর পর মারা যান।
লুলা দা সিলভার দ্বিতীয় স্ত্রী মারিসা লেটিকা দুবার ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি ছিলেন। দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর সংসার করার পর ২০১৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মারিসা। ওই সংসারে তাঁদের চার সন্তান রয়েছে।