নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ইইউ
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে ১০ দফায় রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিদেশি যে কোনো রাষ্ট্রের ওপর সর্বোচ্চ শাস্তি রাশিয়ার মাধ্যমেই প্রয়োগ করেছে তারা। ইইউ বলে আসছে, মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার রাজস্ব কমাতে এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত প্রযুক্তির হ্রাস করার জন্য। তবে, এতে কতটুকু সফল হয়েছে ইইউ, এ নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। আজ বুধবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গবেষণা নোটের উদ্ধৃতি দিয়ে আল-জাজিরা বলছে, ইইউর নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে থামাতে যথেষ্ট নয়। ২০২৩ সালের ইউক্রেন যুদ্ধে আটকাতে নিষেধাজ্ঞাগুলো অতটা কার্যকর হবে না। এর মূলে রয়েছে ইইউ ব্লকের ২৭ দেশের উদাসীনতা। এখনও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ধরে রেখেছে ব্লকটির সদস্যরা। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন অর্থনৈতিক আঘাত দিতে অনাগ্রহ রয়েছে তাদের। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে প্রভাব পড়বে, এই ভয়েই ইইউ কঠোর হতে পারছে না।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত থাকছে তারা। এমনকি আগের নিষেধাজ্ঞা থেকে বাণিজ্যকে সুরক্ষিত রাখতে রাশিয়ার সঙ্গে ভিন্ন রুটে কাজ করছে তারা। অর্থাৎ, অন্য দেশের ট্যাগ লাগিয়ে মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে তারা। এই রুটগুলোর প্রধান দেশগুলো হলো- আরব আমিরাত, তুরস্ক, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, কাজাকিস্তান ও কিরগিস্তান।
বাণিজ্য প্রবাহ
২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পণ্য বিনিময়ে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে ছিল ইইউ। বছরটিতে মস্কোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্য হয় ২৮ হাজার মার্কিন ডলারের। ইউরোপীয় কমিশন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বছরটিতে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে প্রথম সারির দিকে ছিল- জ্বালানি, কাঠ, লোহা, ইস্পাত ও সার।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর এ বাণিজ্যতে কিছুটা ভাটা পড়ে। গত ডিসেম্বর নাগাদ ব্লকের দেশগুলো রাশিয়া থেকে এক হাজার ৮৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।
ইইউর পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ব্লকের দেশগুলো।
এলএনজি
গত বছরে রাশিয়ার সমুদ্রজাত তেল ও কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ। কিন্তু, যুদ্ধের পর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে দেয় মস্কো। আগের তুলনায় ২০২২ সালে ইইউ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমিয়েছে ৪০ শতাংশ। তবে, ভিন্ন চিত্র এলএনজির ক্ষেত্রে।
গত বছর দুই হাজার ২০০ কিউবেক মিটার এলএনজি রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ইউরোপের দেশগুলো। যা, আগের বছর থেকে অর্থাৎ, ২০২০ সাল থেকে এক হাজার ৬০০ কিউবেক মিটার বেশি।
পারমাণবিক উপাদান
এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি ইইউ। ২০২২ সালে ব্লকের দেশগুলো পারমাণবিক শিল্প থেকে ৮১ হাজার ৪০০ ডলার মূল্যের বিভিন্ন উপাদান আমদানি করেছে। ইইউর নিউক্লিয়ার এজেন্সি ইউরাটমের তথ্য মতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যবহারকৃত ইউরেনিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে এটি চতুর্থ অবস্থানে চলে এসেছে। আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিষেবায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
হীরা
গত বছর অর্থাৎ, ২০২২ সালে ১৪০ কোটি ডলার মূল্যের রাশিয়ার হীরা আমদানি করেছিল ইইউ ব্লকের দেশগুলো। এমনকি মস্কোর হীরা শিল্পে ও দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মাইনিং কোম্পানি আলরোসার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তারা।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হীরার বাণিজ্য হয় বেলজিয়ামে। রাশিয়ার হীরা আমদানিতে এই দেশটিকে ব্যবহার করছে ব্লকের দেশগুলো।
রাসায়নিক ও কাঁচামাল
২০২২ সালে রাশিয়া থেকে ২৬০ কোটি ডলার মূল্যের সার আমদানি করেছিল ব্লকের দেশগুলো। যা আগের বছরের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি।
রাশিয়া ও তার মিত্র বেলারুশ থেকে পটাশ আমদানিতে কঠোরতা রয়েছে ইইউর। এ দশে দুটির পটাশ সার আমদানি করে না ব্লকের দেশগুলো। তবে, ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারগুলো অবাধে আমদানি করছে ইউরোপের দেশগুলো।