পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে, হাসপাতালে হাজারও শিশু
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলছে। আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ১৯ শিশু মারা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও কয়েক হাজার। আজ বুধবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ভারতের অঙ্গরাজ্যটির ১২ হাজার মানুষ অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই শিশু। এর মধ্যে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিন হাজারের বেশি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসেবের থেকে অনেক বেশি বলে দাবি করছে রাজ্যটির বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস। আর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো একশরও বেশি শিশুর মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্যটির জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের শিশু ওয়ার্ড রোগীতে ভর্তি। নতুন শিশু রোগী ভর্তির জন্য তাদের আর আসন নেই।
ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ ও ফুসফুসে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে অ্যডিনোভাইরাসের যে ধরন ছড়াচ্ছে, সেটি ভাইরাসটির দুটি স্ট্রেনের মিশ্রণের ফলে তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে, আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় প্রশাসন। এমনকি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সমস্ত কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ক্লিনিকগুলোকে ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিতেও বলা হয়েছে। মহামারির সময় যে রকম বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল ঠিক তেমন ব্যবস্থা ফের নেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তবে, এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয়নি।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘ভাইরাসটির তীব্রতা বাড়ছে, সঙ্গে আক্রান্তের পরিমাণও। এটি মহামারির মতো হয়ে যাচ্ছে।’
গার্ডিয়ান বলছে, গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকার একশ পরিবার অসুস্থ শিশুদের নিয়ে কলকাতার বিসি রয় শিশু হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ পেতে ঘণ্টার ঘণ্টা তারা হাসপাতালের মাঠে অবস্থান করেছিল।
নিজের অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে বিসি রয় হাসপাতালে এসেছিলেন আলআমিন মোল্লা। কলকাতা থেকে ৬০ মাইল দূরে তার বাড়ি। অ্যডিনোভাইরাসের একটি উপসর্গ ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মোল্লার সন্তান কাঁদছিল। মোল্লা বলেন, ‘গ্রামের চিকিৎসকরা সহায়ক ছিলেন না। আমার ছেলে পানি ও খাবার খেতে চাচ্ছে না। এমনকি সে খাবার স্যালাইনও খেতে চাচ্ছে না। এর জন্য তাকে নিয়ে কলকাতায় এসেছি।’
ওই হাসপাতালে থাকা এক বৃদ্ধা বলেন, ‘বনগাঁও থেকে আমি এসেছিলাম। শ্বাসকষ্টে আমার ১০ মাসের নাতি মারা গিয়েছে। মাসখানেক আগ থেকে জ্বর ও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। নাতির কাশির সঙ্গে রক্ত বের হচ্ছিল। চিকিৎসক আমাকে বলেছিল, তার ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’