পি কে হালদারসহ ৬ জনের ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ড
ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের আর্থিক খাতের আলোচিত জালিয়াত, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরপে পিকে হালদারকে ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার একটি আদালত। পি কে হালদারের সঙ্গে আরও পাঁচজন আসামি রয়েছেন। আগামী ৭ জুন পর্যন্ত সবার এই রিমান্ড চলবে।
আজ শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারপতি সৌভিক ঘোষ এ আদেশ দেন।
কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে বাংলাদেশ থেকে পালানো পি কে হালদার গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশপরগনা জেলার অশোকনগর থেকে গ্রেপ্তার হন। পি কেসহ ছয়জনকে ওই দিন গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
গ্রেপ্তারের পর পি কে হালদারকে আদালতে হাজির করলে প্রথম দফায় তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সেই রিমান্ড শেষে গত ১৭ মে তাকে আদালতে হাজির করলে তাকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
এক নারীসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে ‘হাওয়ালা’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে টাকা পাচারের অভিযোগে ২০০২ সালের আইনে মামলা করা হয়। পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা ও সম্পত্তিতে এসব অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
এদিন ইডি পক্ষের আইনজীবী অরিজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এমন অনেক তথ্য পেয়েছি, যার থেকে বোঝা যাচ্ছে, পি কে হালদার ও তার টিম ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত ইডি যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে, তার কোনো আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা দেখাতে পারেননি। ভারতে থাকা তাদের বিপুল সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত চলছে। ভারতে ১৩টি বাড়ি, কয়েকটি ফ্ল্যাট, বোর্ড হাউস ও ৭টি জমি পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের নামে রয়েছে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, মানি লন্ডারিং থেকে আসা প্রায় ১৫০ কোটি রুপি মূল্যের এই সমস্ত সম্পত্তি। যার পরিমাণ প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। পি কে হালদার ও তার টিম ভারতে রিয়েল স্টেটেই অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তবে ক্যাশ অর্থ আপাতত পাওয়া যায়নি।’
তবে টিম পি কে হালদারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের প্রভাবশালীরা জড়িয়ে রয়েছেন কি না সেই প্রশ্নে অরিজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘আপাতত তদন্তের স্বার্থে সেই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের দুই দেশের বিষয়। যদি দুই দেশের সরকার চায় তাহলে আইনি জটিলতা সরিয়ে পি কে হালদার বা তার সহযোগীদের বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ফেরত পাঠানো সম্ভব। এদিন পিকে হালদারদের বিরুদ্ধে নতুন কোনো আইনি ধারা দেওয়া হয়নি। তবে অভিযুক্তরা রিম্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে যেটুকু তদন্তে সহায়তা করেছেন তা দিয়েই তদন্ত এগিয়ে চলেছে।’
অন্যদিকে এদিন অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী আলী হায়দার ও সোমনাথ ঘোষ জানান, অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই ভারতীয়। তারা কেউই বাংলাদেশি নন। আমরা এদিন অভিযুক্তদের চার দিনের জেল হেফাজত চেয়েছিলাম। কিন্ত মহামান্য আদালত তাদের ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘ইডির তরফে এদিন অভিযুক্তরা বাংলাদেশি নাগরিক বলে অভিযোগ করা হয়, যার প্রত্যুত্তরে আমরা ফরেনার্স অ্যাক্ট দিতে বলি। তবে গোটা বিষয়টি ট্রায়াল শুরু না হলে কিছুই বোঝা যাবে না। অপর আইনজীবী আলি হায়দার সাফ বলেন, ‘আপনারা কাকে পি কে হালদার বলছেন? আমরা পি কে হালদার বলে কাউকে চিনি না। আমরা যাকে চিনি তিনি হলেন শিব শঙ্কর হালদার। তিনি ভারতীয় নাগরিক।’