পুতিনকে ঠেকাতে ৩ লাখ সেনা প্রস্তুত রাখবে ন্যাটো
রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো তাদের ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ বাহিনীর সেনা সংখ্যা বর্তমানের ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ করবে এবং ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এ সেনাদের উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখবে।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ্রে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে বৃহস্পতিবার নেতারা আগামী দশকের জন্য রাশিয়াকে সবচেয়ে বড় হুমকি আখ্যা দিয়ে বিপুল সেনা প্রস্তুত রাখার এ পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন।
ন্যাটো জোটকে রূপান্তর করে শক্তি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই এদিন শেষ হয় সম্মেলন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘মাদ্রিদে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে আমাদের মিত্র দেশগুলোতে শান্তি সুরক্ষিত রাখা, সংঘাত ঠেকানো এবং আমাদের জনগণ ও মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’
ন্যাটোর শক্তি বর্তমানে কতটুকু এবং ভবিষ্যতে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার যেকোনো হামলা মোকাবিলাসহ দক্ষিণ সীমান্তেও অন্যান্য সংকট সামাল দিতে জোটকে কীভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ন্যাটো বাহিনীর বর্তমান অবস্থা
তিনটি বাল্টিক দেশ এবং পোল্যান্ডে ন্যাটোর চারটি বহুজাতিক ব্যাটালিয়ন রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এ ব্যাটালিয়নের প্রত্যেকটির সেনা সংখ্যা এক হাজারের মতো। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলে নেওয়ার পর এসব ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছিল।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ন্যাটোর এ সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ন্যাটো তাদের শক্তিশালী রেসপন্স ফোর্সের ৪০ হাজার সেনাকেও সক্রিয় রেখেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে প্রায় আরও ২০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। এ নিয়ে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখে।
ন্যাটোর যে বহুজাতিক ব্যাটালিয়নগুলো মোতায়েন রয়েছে সেগুলোসহ রেসপন্স ফোর্সের অল্পকিছু অংশ নিয়ে ইউরোপে ন্যাটোর সুপ্রিম এলায়েড কমান্ডার (এসএসিইইউআর)-এর অধীনে রয়েছে ৪২ হাজারেরও বেশি সেনা। এর সঙ্গে জঙ্গি বিমান এবং রণতরী তো প্রস্তুত আছেই।
এসএসিইইউআর যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় কমান্ডেরও কমান্ডার। এর অধীনে ন্যাটো মিত্রদেশগুলোর সেনা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
ন্যাটোর জাতীয় বাহিনীও আছে। কিন্তু, সেগুলোর বেশির ভাগ বাহিনীতেই পর্যাপ্ত তহবিল নেই এবং কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে দ্রুত সেনা মোতায়েনের সক্ষমতাও নেই।
ন্যাটোর শক্তিবৃদ্ধির স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা
ন্যাটো এখন হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, স্লোভেনিয়া ও রোমানিয়ায় আরও চার বহুজাতিক ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নেই থাকছে প্রায় এক হাজার সেনা।
দক্ষিণ-পূর্ব মিত্রদেশগুলোর ভূখণ্ডে আকাশ এবং ন্যাটো আকাশসীমা টহল দেওয়ার জন্য উড়োজাহাজের সংখ্যাও বাড়িয়েছে পশ্চিমা সামরিক এ জোটটি।
ন্যাটোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বাহিনী এবং উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা সেনার সংখ্যা বিপুলসংখ্যক বাড়াবে ন্যাটো। তার মানে হচ্ছে, এ সেনারা ইউরোপে যেকোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে মিত্র দেশগুলোর সীমান্তকে রক্ষায় দ্রুত মোতায়েন হতে পারবে।
সেনাদেরকে প্রস্তুত রাখতে তিন-স্তরের একটি ব্যবস্থা নেবে ন্যাটো। এ ব্যবস্থায়, কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রথমে ১০ দিনের মধ্যে এক লাখ সেনা মোতায়েন করা হবে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে মোতায়েন হবে দুই লাখ সেনা এবং তারপর ১৮০ দিনের মধ্যে মোতায়েন হবে পাঁচ লাখ সেনা।
তিন-স্তর বিশিষ্ট এ ব্যবস্থায় প্রথমে ন্যাটো ইউরোপের ট্যাকটিক্যাল ফোর্স, তারপর অপারেশনাল রিজার্ভ ফোর্স এবং তারপর আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা থেকে বাহিনী নিয়ে আসবে, যা ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ নামে পরিচিত।