বাইডেনের জয় দেখতে মরিয়া চীন : ট্রাম্প
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের জয় দেখার জন্য চীন মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে আজ শনিবার সকালে এ মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ট্রাম্প-বাইডেনের অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ শেষ হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরাবরের মতোই সরব দুই প্রার্থী।
ট্রাম্প তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘জো বাইডেন একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং চুক্তিবদ্ধ। নির্বাচনে বাইডেনের জয় দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে চীন। কারণ, বাইডেন জিতলে জিতে যাবে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও তারা পেয়ে বসবে। মূলত এই দুর্নীতির কারণেই আমি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ট্রাম্প আরো লেখেন, ‘কয়েক বছর ধরে একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা দেখেছি, জো বাইডেনের মতো রাজনীতিবিদরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই মার্কিন শ্রমিকদের বিক্রি করে দিয়েছে। কয়েক মিলিয়ন মার্কিন পরিবারের জীবন ছিন্নমূল করে তুলেছিল। আমি বসে থাকতে এবং আপনাদের কাছ থেকে তাদের সুবিধা নেওয়া দেখতে পারছিলাম না।’
এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-বাইডেনের দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের ‘ক্রিমিনাল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ট্রাম্পকে আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জো বাইডেন। ৫০০ অভিবাসী শিশুকে সীমান্ত এলাকা থেকে এবং পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্যাম্পে আটকের জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেন তিনি। বাইডেন আশ্বাস দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বৈধতা দেবেন তিনি।
এ ছাড়া করোনায় লাখো মানুষের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্পের দিকে অভিযোগ তোলেন বাইডেন। যদিও ট্রাম্প বলছেন, ‘চলতি বছরেই ভ্যাকসিন আসবে, আর শেষ হবে এই বৈশ্বিক মহামারি।’
ট্রাম্প সম্পর্কে বাইডেন বলেন, “তিনি (ট্রাম্প) বলেছেন, ‘আমরা এই মহামারি মোকাবিলায় ভালো অবস্থানে আছি। খুব শিগগির এটি শেষ হবে।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যে এতগুলো মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা উচিত নয়। এই একই মানুষ আপনাদের বলেছিলেন, ইস্টার আসার আগেই এই মহামারি চলে যাবে।”
অন্যদিকে ট্রাম্প বাইডেনকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘তিনি (বাইডেন) প্রেসিডেন্ট হলে এই ভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করতে পুরো দেশকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসবেন। যদি আমাদের বিশাল আমলাতন্ত্রের কোনো একজন বলেন দেশ বন্ধ করে দিতে, তাহলে তিনি তাই করবেন।’
এ ছাড়া মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে কথা বলেন বাইডেন। রাশিয়ার কাছে মার্কিন ভোটারদের তালিকা কীভাবে গেল, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাইডেনের অভিযোগ, রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা পুতিন থেকে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিমের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করেছেন ট্রাম্প। এর পাশাপাশি বাইডেনের বার্তা, মার্কিন নির্বাচনে কোনোমতেই বাইরের দেশের নাক গলানো মেনে নেওয়া হবে না।
যদিও ট্রাম্পের দাবি, তিনি একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
চীনের ব্যাংকে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থাকা এবং তাতে ট্যাক্স দেওয়া নিয়ে ট্রাম্প জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে, আর তিনি তাদের মাত্র ২৮ ডলার ট্যাক্স দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরের প্রথম বিতর্কের তুলনায় এই শেষ বিতর্কটি ছিল ভিন্ন মাত্রার। প্রথম বিতর্কে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়, যখন উভয় প্রার্থী ক্রমাগত একে অপরকে তাঁদের মন্তব্য শেষ করতে দিচ্ছিলেন না। যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট বিতর্ক ছিল। তবে এবার একে একে নিজেদের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। তবে প্রশ্নোত্তর পর্বে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করতে থাকেন।