বাখমুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রচণ্ড সংঘর্ষ
বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে দনিয়েৎস্ক অঞ্চলের পূর্বের বাখমুত শহর। সেই শহরের নিয়ন্ত্রণ পেতে রাশিয়া যেন যে কোনো মূল্য চোকাতে প্রস্তুত। অথচ প্রতিদিন অবিরাম হামলা চালিয়েও কিছুতেই গোটা শহরের ওপর কবজা করতে পারছে না রুশ সৈন্যরা। দুই পক্ষই বিশাল সংখ্যক শত্রুদের প্রাণহানির দাবি করছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি যাচাই করার কোনো সুযোগ না থাকায় হতাহতদের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো নিরপেক্ষ চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল রোববার (১২ মার্চ) রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, গত কয়েক দিনে তার সেনাবাহিনীর হামলায় এক হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। ৬ মার্চ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার রুশ সৈন্যের প্রাণহানির দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও কমপক্ষে দশটি গোলাবারুদের গুদামও ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানান জেলেনস্কি।
রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, রুশ বাহিনীর অক্রমণে ২৪ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ভাগনার ভাড়াটে বাহিনীর সৈন্যরা বাখমুত শহরের পূর্বাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রোববার বলেন, বাখমুতের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থলে জোরালো সংঘর্ষ ঘটছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অসংখ্য সৈন্য কাজে লাগালেও তার বাহিনী আরও অগ্রসর হতে পারবে বলে প্রিগোজিন নিশ্চিত। গত কয়েকদিন ধরে তিনি প্রকাশ্যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভাবের অভিযোগ করার পর রোববার তিনি সুর নরম করে বলেছেন, যে অবশেষে মস্কো থেকে গোলাবারুদ আসতে শুরু করেছে। বাখমুত দখল করে ভাগনার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন প্রিগোজিন।
পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ব্যাটেল ট্যাংক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম ও যথেষ্ট গোলাবারুদ পেলে ইউক্রেন সম্ভবত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হারানো জমি পুনর্দখল করতে নতুন অভিযান শুরু করবে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইউক্রেনের সৈন্যরা লেওপার্ড ২-এর মতো ট্যাংক চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা রোববার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির উদ্দেশ্যে গোলাবারুদের সরবরাহের গতি বাড়ানোর ডাক দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ইউক্রেনের পাইলটদের যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এখনই পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এমন বিমান সরবরাহের প্রত্যাশা না করলেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পাইলটদের প্রস্তুত রাখতে চান তিনি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দখল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও যুদ্ধ বন্ধ করতে কোনো এক সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা হবে বলে মনে করছেন জার্মানির এক সাবেক অভিজ্ঞ কূটনীতিক। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সাবেক প্রধান ভল্ফগাং ইশিঙার বলেছেন, আজকের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের পক্ষে হার মেনে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রশ্ন না উঠলেও ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তাই তিনি এখন থেকে এমন সংলাপের কাঠামো প্রস্তুত করার পক্ষে সওয়াল করেন।