বাবা-মা অরাজি, অবশেষে ৬০ বছর পর বিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার
কাজের সুবাদে দেখা হয় তাদের। প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়ে যান তারা। বিয়ের সিদ্ধান্তও নেন। তবে, এতে বাগড়া দেয় মেয়ের বাবা-মা। সেই বাগড়ায় বিয়ে করতে পারেনি ওই প্রেমিক যুগল। অবশেষে ৬০ বছর পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। ঘটনাটি ব্রিটেনের। আজ বুধবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
ভারতীয় গণমাধ্যমটি জানায়, এই এক অবিস্মরণীয় প্রেমের গল্প, প্রায় ছয় দশক আগে বিচ্ছিন্ন হওয়া ব্রিটিশ প্রেমিক যুগল বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ৬০ বছর আগে বাবা-মায়ের প্রচেষ্টায় বিয়ে করতে পারেনি তারা।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য মেট্রো নিউজের বরাতে এনডিটিভি জানায়, ওই যুগলেরা হলেন- লিন অ্যালব্রিটন (৭৯) ও জেনেট স্টের (৭৮)। বিয়ের জন্য কষ্টকর পথ পাড়ি দিয়েছেন তারা। অবশেষে তারা এখন এক হয়েছেন ও বিয়ে করতে সক্ষম হয়েছেন। এই দম্পতি প্রথম মিলিত হন ১৯৬৩ সালে, ওই সময় লিনের বয়স ছিল মাত্র ১৯ ও জেনেটের ১৮। উইট দ্বীপের নিউপোর্টের সেন্ট মেরিস হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করার সময় তাদের প্রথম পরিচয় হয়। এরপরেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়েন।
সম্পর্কের কয়েক মাস না যেতেই জেনেটকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় লিন। এতে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয় জেনেট। পরে, কাজের জন্য লিন অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। জেনেটকেও সেখানে নেওয়া পরিকল্পনা করেন।
জেনেট তাঁর বাবা-মাকে লিনকে বিয়ের কথা জানালে এতে তারা বাগড়া দেয়। আর জেনেট নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কারণ তিনি তখন ২১ বছরে পৌঁছাননি। ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী, কোনো মেয়ে ২১ বছরে পৌঁছালে সে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এরপরেই আলাদা হয় জেনেট ও লিন।
এরপর কেটে যায় দীর্ঘ ৫০ বছর। ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে বিয়ে করে ওই প্রেমিক যুগল। এর কিছুদিন বাদেই নার্স হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ শুরু করেন জেনেট। বিয়ে করেন এক নৌ কর্মকর্তাকে। তাদের ঘরে দুটি সন্তানেরও জন্ম হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সাবেক প্রেমিকা জেনেটকে খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন লিন। অস্ট্রেলিয়া থেকে যান নিউপোর্ট। সেখানে গিয়ে একটি লাইব্রেরিতে রোল নম্বর দিয়ে পেয়ে যায় জেনেটের ঠিকানা। নিজের সাবেক প্রেমিকার সামনে গেলে লিনকে চিনতে পারে জেনেট। তবে, স্বামীর ভয়ে লিনকে না চেনার ভাব দেখায় জেনেট।
লিন বলেন, ‘জেনেটের সামনে গেলে তার প্রতিক্রিয়া কি হবে সে নিয়ে আমি ভয় ছিলাম। আমি তাকে দেখতে পাব কি না তাও জানতাম না। আমি শুধু একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি শুধু আশা করেছিলাম সে ঠিক আছে- আমি আর কিছু আশা করিনি।’
জেনেট বলেন, ‘যখন আমার বাড়ির সামনের বাগানে আমার সাবেক দাঁড়িয়ে ছিল, তখন আমি তাকে চিনতে পারিনি। তবে, যখন আমি বুঝতে পারি সে লিন, আমার মৃত্যুর উপক্রম হয়ে গেছিল। আমি অনেক খুশি ছিলাম তাকে দেখে। তার কথা আমি যে কত চিন্তা করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার স্বামীকে মিথ্যে পর্যন্ত বলেছিলাম।’
দুবছর বাদে জেনেটের স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে লিনকে খুঁজে বের করেন জেনেট। পরে লিনের ইচ্ছায় ব্রিটেনের স্টিভেনেজে পরিবারসহ চলে যান জেনেট। সেখানেই জেনেটকে ফের বিয়ের প্রস্তাব দেন লিন। রাজিও হয়ে যায় জেনেট। গত মাসের ১১ তারিখে তাদের বিয়ে হয়। এতে লিন ও জেনেটের ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে নাতি-নাতনিরা উপস্থিত ছিলেন।