বিবিসির কর্মীদের মোবাইলফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে ভারতীয় কর কর্মকর্তারা
ভারতীয় আয়কর কর্মকর্তাদের ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাইয়ের অফিসে তল্লাশি অভিযান তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় বিবিসির সম্পাদকীয় ও প্রশাসনিক কর্মীদের মোবাইলফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে কর কর্মকর্তারা। দুই সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ সংস্থাটি বলছে, মঙ্গলবার শুরু হওয়া বিবিসির দুই অফিসে তল্লাশি অভিযান আজও চলছে। গতকাল অর্থাৎ বুধবার রাতে তল্লাশি অভিযানের পর বিবিসির অফিসেই ঘুমিয়ে পড়েন কয়েকজন কর্তা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বিবিসির কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাধ করা হয়।
এক সূত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘কর কর্মকর্তারা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাধ করেছে। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ও মোবাইল চেক করে। পরে সেগুলো আবার ফেরত দেওয়া হয়।’
ওই সূত্র আরও বলেন, ‘ইলেকটনিক্স ডিভাইসগুলোর পার্সওয়ার্ডের জন্য সেগুলোর মালিকের কাছে প্রশ্ন করেন কর কর্তারা।’ একই কথা জানায় রয়টার্সর আরেকটি সূত্র।
কয়েক সপ্তাহ আগে ২০০২ সালের গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি। কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন তা বিবিসির তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়েছে। ওই দাঙ্গায় এক হাজার মানুষ মারা যায়, এর মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম ধর্মালম্বী।
বিবিসির তথ্যচিত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি, দেশটিতে তথ্যচিত্রটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেসবুক ও ইউটিউবকে তথ্যচিত্রটি সরানোর নির্দেশ দেয় মোদি সরকার।
ভারত সরকার বলছে, ‘বিবিসির ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি পক্ষপাতদুষ্ট। এতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব ও ঔপনিবেশিক মানসিকতা দেখানো হয়েছে।’ তবে, তথ্যচিত্রটি নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছে বিবিসি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, কর কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমাদের আশা, দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে।’
রয়টার্স বলছে, কী কারণে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি অফিসে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, এ নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির আয়কর বিভাগ। এমনকি তথ্যচিত্রের কারণে এমনটি করা হচ্ছে কিনা তা অস্বীকার করেছে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা দেশটির একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কর সংক্রান্ত বিষয়ে বিবিসিকে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে, তারা সন্তোষজনক কোনো জবাব দেয়নি। এরপরেই তাদের অফিসে অভিযান চালায় কর কর্তারা।’