বিরোধী ঐক্যের জন্য তৎপর রাহুল গান্ধী
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র বছরখানেক বাকি। অবশেষে বিরোধী ঐক্যের জন্য সচেষ্ট হয়েছেন রাহুল গান্ধী। খাড়গেকে সামনে রেখে তিনি একের পর এক বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলছেন। ইতোমধ্যে কথা বলেছেন নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব ও শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। এই তিন নেতা অবশ্য ইউপিএতে আছেন। জেডি ইউ, আরজেডি, এনসিপি হলো কংগ্রেসের জোটশরিক। ফলে আগে নিজের জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর জোটের বাইরে দিকে তাকাবার নীতি নিয়েছেন রাহুলরা।
গত বুধবার (১২ এপ্রিল) মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে আসেন নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব। এই বৈঠকের পর রাহুল গান্ধী বলেন, ‘এটা হলো ২০২৪-এর নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমরা একটা ভিশন তৈরি করব। বিজেপিকে হারাতে বিরোধীরা কোন পথে চলবে, সেই ভিশন।’
লোকসভা থেকে কিছুদিন আগেই বহিষ্কৃত হওয়া রাহুল বলেন, ‘এটা একটা প্রক্রিয়া। আমরা চাই, আরও বেশি করে বিরোধী দল আমাদের সঙ্গে যোগ দিক। আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে এগোব। আমরা একটা মতাদর্শগত লড়াই লড়ছি। আমাদের এক হয়ে লড়াই করতে হবে।’
খাড়গে, নীতীশ কুমার ও তেজস্বী একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে খাড়গে বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এক হয়ে লড়াই করব। সব বিরোধীদলের ঐক্য চাইছি আমরা।’
নীতীশ কুমার বলেন, ‘আমরা সবাই আলোচনা করেছি। যত বেশি সম্ভব দলকে একজোট করার চেষ্টা করব। সবাই একসঙ্গে মিলে চলব। যারা একসঙ্গে আসতে রাজি হবেন, তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। অনেক দল একজোট হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। এই বৈঠকও খাড়গের বাড়িতে হয়।
বৈঠকের পর শরদ পাওয়ার বলেন, ‘আমি চাই, সব বিরোধীনেতার সঙ্গে কথা হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ সব বিরোধীনেতার কাছে আমাদের যেতে হবে ও কথা বলতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগোব।’
খাড়গে বলেন, ‘শরদ পাওয়ার মুম্বই থেকে দিল্লি এসেছেন এবং আমাদের দিকনির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সব বিরোধীদলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাঁচাতে গেলে এই ঐক্য দরকার।’
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘বিরোধী ঐক্যের সূচনা হয়েছে। সব দল এই প্রক্রিয়ার প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
শুধু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই নয়, নীতীশ কুমার এরপর সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআইয়ের ডি রাজার সঙ্গে বিরোধী ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এরপর সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘বিরোধী ঐক্যের বিষয়টি এখন গতি পেয়েছে। বিরোধী ঐক্য হবে। রাজ্যস্তরে আসন সমঝোতা হবে।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন, ‘ভারতে ভোটের পরে জোট গঠিত হয়। এনডিএ, ইউপিএ সবই এভাবেই তৈরি হয়েছিল।’
এ ছাড়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও দেখা করেন নীতীশ।
বিরোধী ঐক্য কি সম্ভব?
ভারতে ভোটের আগে যখনই বিরোধী ঐক্যের প্রয়াস হয়, তখনই প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি এটা সম্ভব? ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর এনডিটিভিকে বলেন, ‘২০২৪-এর প্রকৃত বিরোধী ঐক্য সম্ভব নয়।’ তার মতে, ‘বিরোধীদের মতাদর্শগতভাবে একজোট হতে হবে। তাদের নিজেদের শক্তি বুঝতে হবে। হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদ ও জনকল্যাণের বিষয়টি বুঝতে হবে। হিন্দুত্বের মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে বিরোধী জোটের একটা মতাদর্শ থাকতে হবে।’
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, ‘বিরোধী নেতারা সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে চান। নীতীশ কুমার তাই খাড়গে ও রাহুল গান্ধীকে খুশি করতে চাইছেন। নীতীশের এটা জানা নেই, ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি নেই।’
বিরোধীদের সামনে দুইটি প্রশ্ন আছে, তারা জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, আর ভোটের সময় কে জোটকে নেতৃত্ব দেবেন? সূত্র জানাচ্ছে, রাহুলদের ফর্মুলা হলো—এসব বিষয় নিয়ে এখন আলোচনাই করা হবে না। জিতলে ভোটের পর এই নিয়ে কথা হবে। আপাতত মোদিকে কীভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে, সেই বিষয়টাই ঠিক করা হবে।