বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ ফের বাড়ছে
মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের আঘাত শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা আবারও ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী কোভিডে মৃত্যু এবং করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাত দিয়ে ইউএস নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল বুধবার জানিয়েছে, টানা ৯ সপ্তাহ কোভিডে মৃত্যুর হার কমতে থাকার পর তা গত সপ্তাহে বেড়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে তা ৩ শতাংশ বেশি।
আর, করোনার সংক্রমণ আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে ১০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩০ লাখ বেড়েছে। এর মধ্যে ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক।
অন্যদিকে, বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন বা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে। শিথিল করা হচ্ছে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা। গতি হারিয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। আর, এসবের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত সংক্রামক ডেলটা ভ্যারিয়্যান্ট। অনেক দেশের সরকার বিধিনিষেধ তুলে নিতে জনগণের দিক থেকে চাপেও রয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, ডেলটা ভ্যারিয়্যান্ট এরই মধ্যে বিশ্বের ১১১টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বিশ্বব্যাপী প্রধান ভ্যারিয়্যান্ট হিসেবে দেখা দিতে যাচ্ছে।
বেলজিয়ামে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটিতে তরুণদের মধ্যে ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টের উপস্থিতি অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যে ছয় মাস পর এক দিনে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড ডৌডি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমরা জানি, কোভিডের ছড়িয়ে পড়ার বিস্ফোরক মাত্রার শক্তি রয়েছে।’
পৃথিবীজুড়ে কোভিডে মৃত্যু বৃদ্ধির মধ্যে আর্জেন্টিনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। রাশিয়ায়ও এ সপ্তাহে সর্বাধিক মৃত্যু রেকর্ড করা হয়।
মিয়ানমারে রাতদিন করোনায় মৃতদের সৎকার চলছে। ইন্দোনেশিয়ায় গতকাল বুধবার প্রায় এক হাজার মানুষ করোনায় মারা গেছে এবং দেশটিতে এক দিনে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষের করোনা পজিটিভ আসে। অথচ গত মাসের এই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় দিনে আট হাজারের মতো মানুষ দৈনিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
কোভিড টিকা প্রাপ্তির হার সর্বোচ্চ যে যুক্তরাষ্ট্রে সেখানে গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তবে, মৃত্যুহার এখনও নিম্নমুখী রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে করোনায় দৈনিক ২৬০ জনের মতো মৃত্যু হচ্ছে।
জাপানের টোকিওতেও দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে, খালি থাকছে না হাসপাতালের শয্যা। শহরটিতে চতুর্থ দফায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অলিম্পিক গেমসের আগ পর্যন্ত সংক্রমণ হাজার ছাড়াতে পারে এবং অলিম্পিক চলাকালে তা কয়েক হাজার হয়ে যেতে পারে।
এদিকে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে লকডাউন দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। সংক্রমণের মাত্রা বেশি হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া রাজধানী সিউলে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানাতে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
অন্যদিকে, বার্সেলোনাসহ স্পেনের বেশ কিছু অংশে জারি করা হয়েছে রাত্রিকালিন কারফিউ। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, সামনে সপ্তাহে ইংল্যান্ডজুড়ে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলেও বাস ও ট্রেনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকবে। ইতালি জানিয়েছে, দেশের বাইরে গেলে ফেরার সময় কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
তবে জন্স হপকিন্সের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে যেখানে বিশ্বব্যাপী দৈনিক ১৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে, টিকাদান কার্যক্রমের ফলে এখন দৈনিক সাত হাজার ৯০০ জনে নেমে এসেছে। গত এপ্রিলের শেষের দৈনিক সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল। বর্তমানে অর্ধেকে নেমে সাড়ে চার লাখের মতো মানুষ দৈনিক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
কিন্তু, বিশ্বব্যাপী করোনায় গত সপ্তাহের মৃত্যু ও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিশেষজ্ঞ ও সরকারপ্রধানদের ভাবিয়ে তুলছে।
টিকাদানে ধীরগতি
করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে টিকাদান কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সী অভিনেত্রী ও গায়িকা অলিভিয়া রড্রিগোকে গতকাল বুধবার জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ করে আনেন। তরুণ-তরুণীদের কোভিড টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলতে এই উদ্যোগ নেন বাইডেন। অলিভিয়া সেখানে বলেন, ‘টিকা হলো এমন একটি জিনিস, যা নিলে আপনি আরও বেশি কিছু করতে পারবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশের বেশি অর্থাৎ প্রায় ১৬ কোটি মানুষ কোভিড টিকার পুরো ডোজ নিয়েছেন। দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণেরাই টিকা নিতে কম আগ্রহ দেখিয়েছে।
এজন্য ওহাইও, মিশিগান, মিসৌরি ও আরাকানসাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ কোভিড টিকা নিতে উৎসাহ দিতে পুরস্কার ও উপহার দেওয়ার পদ্ধতি হাতে নিয়েছে। অনেক অঙ্গরাজ্যে পুরস্কারের মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশই কোভিড টিকার সংকটে ভুগছে। এসব দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি থাকলেও টিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় যখনই টিকার সরবরাহ মিলছে তখনই তা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।