বয়স যত বেশি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সুফল তত বেশি : ইএমএ
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, এই টিকা গ্রহীতার বয়স বেশি হলে, তাঁর সুরক্ষার হারও বেশি হয়। ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইএমএ গতকাল শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে। ইএমএ বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে রক্ত জমাট বাধাজনিত যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সে তুলনায় এই টিকায় প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষার বিষয়টি এখনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ কমে গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ জানিয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনায় সতর্কতার অংশ হিসেবে কয়েকটি দেশ প্রবীণদের এই টিকা দেওয়া স্থগিত করে। ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা ইএমএকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলে ইউরোপীয় কমিশন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে ইএমএ।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক ইএমএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতার বয়স যত বেশি, এই টিকার সুফল তত বেশি পাওয়া যায় বলে দেখা গেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই টিকা নিয়ে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, তার তুলনায় প্রাপ্তবয়স্ক সব বয়সীর ক্ষেত্রে টিকার সুফল পাওয়ার হার বেশি। তবে, অল্প কিছু ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পর রক্তে প্লাটিলেট কম থাকাসহ রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাও ঘটেছে।’
বিবৃতিতে এও বলা হয়, প্রতি এক লাখ টিকা গ্রহীতার মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার বিরল ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া এবং কোভিড-১৯-এ মৃত্যু রোধে কার্যকর। এই টিকার সচরাচর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত হালকা বা মাঝারি মাত্রার হয় এবং সেগুলো কয়েক দিনের মধ্যে ভালোও হয়ে যায়।’
তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা বেশি দেখা গেছে, এমন দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্রুত হ্রাস পায়।
দ্য অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) ও ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষণা বলছে—অন্য সব বয়সীদের মতো ৭৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রেও অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজারের টিকা একইভাবে কাজ করে। এমনকী শরীরে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এসব টিকা ঠিক একইভাবে কাজ করেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পর সব বয়সী মানুষের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের টিকা নেওয়ার পর সবার মধ্যেই কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অ্যান্টিবডি তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে করোনার টিকার প্রভাব কেমন, তা ছিল এই গবেষণার দুটি দিক।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ কমে গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর উপসর্গসহ করোনার সংক্রমণ ৭৪ শতাংশ কমেছে। এবং উপসর্গবিহীন করোনার সংক্রমণ কমেছে ৫৭ শতাংশ।
আর, যাঁরা ফাইজারের করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি কমেছে ৯০ শতাংশ। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে একই হিসাব দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি দেরিতে শুরু হওয়ায় খুব অল্পসংখ্যক মানুষ এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পেরেছেন।