ভারতে টিকার চাহিদা মেটাতে বৈশ্বিক সরবরাহ থেকে নজর সরাচ্ছে সেরাম
ভারতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য ভ্যাকসিনের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। আর তাই নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহের কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে বৃহত্তর ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের জন্য। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের টিকা বিতরণ কর্মসূচিতে (কোভ্যাক্স) গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে যোগ দেয় ভারত। কোভ্যাক্সের অন্যতম লক্ষ্য হলো—স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম অথবা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন বিতরণ করা।
গত বছর প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী বলা হয়েছিল, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৯২টি দেশের জন্য করোনার ভ্যাকসিনের ২০০ মিলিয়ন ডোজ প্রস্তুত করবে। কিন্তু, ভারতের করোনা পরিস্থিতি কয়েক মাসের মধ্যেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত মার্চে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, যেটি প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
এর মধ্যেই গত শুক্রবার ভারতে দুই লাখ ১৭ হাজার ৩৫৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এটিই ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের রেকর্ড।
ভারতের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির ফলে গত এক সপ্তাহেই করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।
আর এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লিতে কারফিউসহ বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এজন্য লকডাউনের আশঙ্কায় আগে থেকেই বড় বড় শহরগুলো থেকে নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। এর মধ্যে পাঁচটি রাজ্যে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে এবং ফেডারেল সরকারকে সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আর তাই, কোভ্যাক্সের কার্যক্রমের চেয়ে নিজ দেশের মানুষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার ও সেরাম ইনস্টিটিউট।
আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট গাভি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে গত ২৫ মার্চ বলা হয়েছে, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মার্চ-এপ্রিল মাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ বিলম্বিত হবে। ভারতে করোনার ভ্যাকসিনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই বিলম্ব হচ্ছে।’
এরই মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে ২৮ মিলিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্চ মাসে ৪০ মিলিয়ন ও এপ্রিলে ৫০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন সরবরাহের কথা ছিল। কোভ্যাক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘সরবরাহ সম্পন্ন করার জন্য ভারত সরকার ও কোভ্যাক্সের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে।’
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদার পুনাওয়াল্লা বলেছেন, ‘ভারত যে এই প্রথমবারই কোভ্যাক্সে এর সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে, তা নয়। গত জানুয়ারিতে ভারত সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট উত্পাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ভারত প্রথমে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বল্প আয়ের অংশকে অগ্রাধিকার দিতে চায়।’