ভারতে পেঁয়াজের কম দামে কাঁদছে কৃষক, ২০০ কিলোমিটার পদযাত্রা
পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভের পর মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে ২০০ কিলোমিটার পদযাত্রা শুরু করেছে। যদিও বিক্ষোভের পর কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ চাষীদের জন্য কিছু আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু কৃষকরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তারা তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।
নাসিক জেলার নামদেব ঠাকরের বিশাল পারিবারিক খামারে সারি সারি পেঁয়াজ পড়ে আছে। এই কৃষক বলেছেন যে, তিনি ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে ও বাজারে নিয়ে যেতে শ্রমিক নিয়োগের জন্য অর্থ ব্যয় করতে চান না । কারণ তিনি এই ব্যয় পুষিয়ে নিতে পারবেন না।
নামদেব মহারাষ্ট্রের হাজার হাজার কৃষকদের মধ্যে একজন যারা গত কয়েক সপ্তাহে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার পর থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ পাঠানোর পর হতাশায় তার ফসল পুড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যরা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পেঁয়াজের পার্সেল পোস্ট করেছেন।
ভারত হচ্ছে চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ, যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৪ মিলিয়ন টন। মহারাষ্ট্রে এর অর্ধেকেরও বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। এছাড়া ভারতের উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
ভারতে পেঁয়াজের দামে বিরাজ করছে অস্থিরতা। দেশটির বেশিরভাগ রাজ্যে সবজিটি রান্নার একটি প্রধান উপাদান এবং এর পচনশীলতার জন্য এটি খুব বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। পেঁয়াজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। বাড়তি সরবরাহ দামের পতন ঘটাতে পারে, হাজার হাজার কৃষককে সংকটে ফেলতে পারে। আবার ঘাটতি দাম বাড়াতেও পারে, ভোক্তাদের ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে যা অতীতে সরকার পতনের অন্যতম কারণ ছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন যে, মহারাষ্ট্রে সর্বশেষ দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হল যে জনবহুল উত্তরের রাজ্যগুলো থেকে চাহিদা হ্রাস পাওয়া। কারণ উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান রাজ্যগুলোতেও পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্ত কুয়ালেকার বলেছেন যে, অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার পরিবর্তনও উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলছে।
ভারতে বর্ষা ও শীত এই দুই ঋতুতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। শীতকালীনফসল সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম দিকে তোলা হয়। এই পেঁয়াজের কম সময় সংরক্ষণ করা যায়। তাই দ্রুত বাজারে পৌঁছাতে হবে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে তোলা বর্ষার ফসল দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
কুয়ালেকার বলেছেন, ‘গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তাই কৃষকরা তাদের চাষ করতে দেরি করেছিল। এর ফলে মার্চ মাসে পেঁয়াজ ফসলের একটি বিশাল উদ্বৃত্ত হয়েছে যা অন্যথায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে আসতে পারত। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শীতের ফসল যখন বাজারে পৌঁছাবে তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে’।
নাসিকের কৃষকরা বলছেন, তারা পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের জন্য মাত্র ২০০-৪০০ রুপি পাচ্ছেন। মহারাষ্ট্রের একজন কৃষক নেতা অজিত নাভালে বলেন, ‘কৃষকের অন্তত ৪০০ রুপি লাভ করতে হলে পেঁয়াজের দাম প্রতি ১০০ কেজিতে ১২০০ রুপির ওপরে থাকতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে খুব কম দামে পেঁয়াজ কিনে এবং শহরে বেশি দামে বিক্রি করে। শেষ পর্যন্ত কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়’।
নাভালে বলেন, শুধু মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা সরবরাহের আধিপত্য থেকে উপকৃত হয়। এটা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ যে সরকার হস্তক্ষেপ করছে না।