ভিয়েতনামে শনাক্ত হলো করোনার বিপজ্জনক ‘হাইব্রিড’ ভ্যারিয়্যান্ট
ক্রমেই ধরন বদলাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। এবার ভারতীয় স্ট্রেইন এবং ব্রিটিশ স্ট্রেইনের সংমিশ্রণে নতুন একটি ‘হাইব্রিড’ ভ্যারিয়্যান্ট শনাক্ত করল ভিয়েতনাম। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন থান লং গতকাল শরিবার জানান, নতুন এই মিশ্র ভ্যারিয়্যান্ট বাতাসে ভেসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। এবং অন্য ভ্যারিয়্যান্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। নতুন এই ভ্যারিয়্যান্ট ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে জানিয়েছেন ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রথম থেকেই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিল ভিয়েতনাম। এ পর্যন্ত সে দেশে মোট সংক্রমণ মাত্র ছয় হাজার ৭০০-এর কিছু বেশি। আর দেশটিতে করোনা মারা গেছে ৪৭ জন। সংক্রমণের বাড়াবাড়ি তেমন হয়নি। কিন্তু, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে চিত্রটি ভিন্ন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। দেশটির মোট সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি ( তিন হাজার ৬০০ জন) হয়েছে এপ্রিলে।
ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন বলেন, ‘আমরা জিন সিকোয়েন্সিং করছিলাম। তাতে এক করোনা রোগীর দেহে এমন একটি স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, যেটি ভারতীয় ও ব্রিটিশ স্ট্রেইনের মিশ্রণ। এটি মূলত ছিল যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন। তার সঙ্গে ভারতীয় স্ট্রেইন মিশেছে।’ ভিয়েতনামের একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে স্ট্রেইনটির বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে সরকার।
ভিয়েতনামে এ পর্যন্ত করোনার সাতটি স্ট্রেইন চিহ্নিত হয়েছে—বি.১.২২২, বি.১.৬১৯, ডি৬১৪জি, বি.১.১.৭ (ব্রিটিশ স্ট্রেইন), বি.১.৩৫১, এ.২৩.১ ও বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট)।
নতুন মিশ্র ভ্যারিয়্যান্ট সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হলো— অন্য স্ট্রেইনগুলোর চেয়ে ওটি অনেক বেশি সংক্রামক। খুব দ্রুত প্রতিলিপি (রেপ্লিকেটেড) গঠন করতে পারে এটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন বলেন, ‘এ কারণের দেশের বিভিন্ন অংশে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই স্ট্রেইন।’
করোনাভাইরাসের এমন ভয়াবহ মিউটেশন, নতুন নতুন স্ট্রেইন তৈরি এবং সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মুখে একমাত্র আশা টিকাকরণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা করোনার পরের ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে ছোটরা। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এরই মধ্যে কিশোর-কিশোরীদের টিকাকরণ শুরু হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড টিকার ছাড়পত্র দিয়েছে। টিকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ জানিয়েছে, ট্রায়ালে টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি এই বয়সীদের। তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেলেনি। জার্মানি এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, সামনের মাস থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে। ইইউ’র স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকাইডস বলেন, ‘মহামারিকে বিনাশ করার পথে আরও এক ধাপ এগোলাম আমরা।’ তবে টিকাকরণকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। অভিভাবকেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, সন্তানকে টিকা দেওয়া হবে কি না।