মরে গিয়েও শনাক্ত করে দিলেন খুনিকে!
চার বছর ধরে স্ত্রী ও ছেলে হত্যা মামলাটি চলছিল আদালতে। আইনজীবী অ্যালেক্স মারডফ এই মামলার একমাত্র আসামি। দীর্ঘ এই সময়ে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছিলেন অ্যালেক্স। তার দাবি, স্ত্রী মেগি ও ২২ বছর বয়সী ছেলে পলকে যখন খুন করা হয় সেসময় তিনি ওই এলাকায় ছিলেন না। তবে, মরে গিয়েও পল তার হত্যাকারীকে শনাক্ত করে দিয়েছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মরে গিয়েও বাবার মিথ্যে উন্মোচন করেছে দিয়েছে পল। শেষ পর্যন্ত তাকে জোড়া খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আজ শনিবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
গত বৃহস্পতিবার জোড়া খুনের অভিযোগে সাউথ ক্যারালোইনার একটি আদালতের বিচারক অ্যালেক্সকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরের দিনই তাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে, রায়ের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন অ্যালেক্স।
এ বিষয়ে ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টির অ্যর্টনি ডেভ আরোনভার্গ বলেন, ‘বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ, পরিশেষে সংশ্লিষ্ট প্রমাণ দিল ভুক্তভোগী পল মারডফ। বেঁচে না থেকেও নিজের খুনের সমাধান সেই করলো।’
সিএনএন বলছে, এই জোড়া খুনের প্রমাণ এসেছে পলের রেকর্ড করা একটি ভিডিও থেকে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি ভিডিওটি করেন। এতে দেখা যায়, তাদের বাড়িতে পালিত কুকুরটি রয়েছে। আর তখন অ্যালেক্সের কণ্ঠ ভিডিওটিতে শোনা যায়। ওই বাড়িতেই গুলি করে খুন করা হয় পল ও তার মাকে।
বিচারের শুরু থেকেই অ্যালেক্স দাবি করছিল, সে ঘটনাস্থলে ছিল না। এমনকি শহরেই ছিল না। তবে, আদালতে যখন পলের রেকর্ড করা ভিডিওটি প্রমাণস্বরুপ তোলা হয়, তখন তিনি হতভম্ব হয়ে পড়ে। ভিডিওতে তার কণ্ঠ কীভাবে এলো এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালেক্স আদালতকে বারবার মিথ্যে বলেছেন। এমনকি ট্রায়ালের আগ পর্যন্ত সে ভিডিওটি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিল।
প্রতিবেদনে সিএনএন জানায়, আদালতে নিজের অবস্থান নিয়ে মিথ্যে বলা নিয়েও একটি যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন অ্যালেক্স। তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেইনকিলার ওষুধ খাওয়ায় তার স্মৃতিভ্রম হয়েছে। দীর্ঘ দুই দশক ধরে নিজের কর্মস্থল ও ক্লায়েন্টদের মিথ্যে বলে কয়েক মিলিয়ন ডলার চুরি করেছেন স্বীকার করেন তিনি। অ্যালেক্স বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সব করতে পারি কিন্তু একটি জিনিস করতে পারি না। সেটি হলো পরিবারের কাওকে হত্যা।’ তবে, জুরি তার বক্তব্য আমলে নেয়নি।
এই মামলার প্রসিকিউটর ও সাউথ ক্যারোলাইনার অ্যার্টনি জেনারেল এলান উইলসন বলেন, ‘আমার ধারণা, পলের ভিডিওটি তাকে বিচার পাইয়েছে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ছিল। এমনকি বিচারকরা সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছে। অ্যালেক্স তাদের প্রভাবিত করতে চেয়েছিল। তবে, তারা সঠিক রায়টি দিয়েছে।’
অ্যালেক্সের মামলায় বিচারক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেণ ক্রেইগ মৌয়ের। এই বিচারক বলেন, ‘ভিডিওটি আসামিকে শনাক্ত করেছে। ভিডিওতে আমি আসামির কণ্ঠ স্পষ্টভাবে শুনতে পাই। এমনকি সবাই এটি শুনেছে।’
অ্যালেক্স বড় ধরণের মিথ্যেবাদী আখ্যা দিয়ে ক্রেইগ বলেন, ‘সে মিথ্যেবাদী তবে, অত বড় হতে পারেনি।’
ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়েছিল রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে। ওই রাতেই পল ও তার মাকে খুন করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাত ৯টার দিকে মা ও ছেলেকে গুলি করে খুন করা হয়।