মারিউপোলে আহত সেনাদের উদ্ধারে রাশিয়াকে ইউক্রেনের প্রস্তাব
মারিউপোলের ইস্পাত কারখানায় আটকা পড়েছেন একাধিক আহত ইউক্রেনীয় সেনা। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে ইউক্রেন। খবর রয়টার্স ও ডয়চে ভেলের।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে সে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মারিউপোল শহরের কাছে অ্যাজভস্টাল স্টিল প্লান্টে (ইস্পাত কারখানা) বেশ কয়েক জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আহত অবস্থায় আটকা পড়েছেন। ওই কারখানা এখনও বাইরে থেকে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ ও রেডক্রসের সহায়তায় অ্যাজভস্টাল স্টিল প্লান্ট থেকে সব বেসামরিক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এবার আহত সেনাদেরও উদ্ধার করতে চাইছে ইউক্রেন। এর জন্য রাশিয়ার শর্ত মানতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় প্রশাসন।
ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি—আহত সেনাদের উদ্ধারের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আপস-বৈঠকে বসতে চাইছে ইউক্রেন। তবে, রাশিয়া এখনও ইউক্রেনের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। রাশিয়ার দাবি—ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিন্তু, ইউক্রেন রাশিয়ার এ দাবি মানতে চাইছে না।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার বন্দিদের হস্তান্তর করে ইউক্রেনের সেনাদের উদ্ধার করার প্রস্তাব রুশ বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া এখনো এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানায়নি।
জেলেনস্কি কী বলছেন
বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ সেনাদের পরাজয় হয়ে গেছে। পরাজয়ের পরেও তারা ক্ষেপণাস্ত্র, বোমারু বিমান, গোলাবারুদ নিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। জেলেনস্কির দাবি—গোটা বিশ্বের কাছে রাশিয়ার পরাজয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি, যারা এখনও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে, তাদের কাছেও এ বার্তা পৌঁছে গেছে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়া ভীতু, তাই যুদ্ধ থামাতে পারছে না। জেলেনস্কি যখন এ কথা বলছেন, তখন ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে নতুন করে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে রাশিয়ার কী অবস্থা?
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান বলছেন—পূর্ব ইউক্রেনের উত্তরাংশে বেশ কিছু অঞ্চল ইউক্রেনের সেনারা নতুন করে দখলে নিয়েছে। বিশেষ করে, খারকিভের উত্তরের বেশ কিছু এলাকা তারা পুনর্দখল করতে পেরেছে বলে ইউক্রেনের সেনাপ্রধানের দাবি। তবে, দক্ষিণে রাশিয়া বেশ কিছু এলাকা দখল করে রাখতে পেরেছে বলে তিনি জানান।
হাজারখানেক মরদেহ উদ্ধার
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে আরও হাজারখানেক মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এসব মরদেহে অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট। এতে আবারও প্রমাণ হয়েছে যে, রুশ সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
অন্যদিকে, ইউক্রেন রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করেছে। একুশ বছর বয়সি এক রুশ সেনাকে দোষী প্রমাণ করা হয়েছে। এই প্রথম কোনো রুশ সেনাকে দোষী প্রমাণ করা হলো। ওই রুশ সেনা এক সাইকেলআরোহী বৃদ্ধকে গুলি করে মেরেছিলেন বলে অভিযোগ।
খাবার সরবরাহ
অভিযোগ রয়েছে—রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করে রেখেছে। কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়া কোনো জাহাজ যেতে দিচ্ছে না বলে যুদ্ধের শুরু থেকেই অভিযোগ করছিল আন্তর্জাতিক মহল ও ইউক্রেন। এর ফলে কোনো খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ যাতায়াত পারছে না। এতে করে আফ্রিকা ও ইউরোপে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে জাতিসংঘসহ একাধিক সংস্থা জানিয়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন থেকে স্থলপথে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের বিকল্প পথ খুঁজছে ইউরোপ। রাশিয়া ও ইউক্রেন ইউরোপ ও আফ্রিকায় বিপুল খাদ্য সরবরাহ করে। কৃষ্ণসাগরের পথটিকে তাই বিশ্বের ‘ব্রেড বাস্কেট’ বলে অভিহিত করা হয়। কীভাবে বিকল্প পথে খাদ্য সরবারহ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ইউরোপের একাধিক দেশ।