মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত নেতাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত একটি কার্যনির্বাহী আদেশে অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে আজ বৃহস্পতিবার এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে সামরিক নেতা, তাঁদের ব্যবসা ক্ষেত্র এবং তাঁদের পরিবার। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক বিলিয়ন ডলারের সরকারি তহবিলে যাতে সামরিক বাহিনী হাত না দিতে পারে, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। যাদের মধ্যে এক নারীর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ওই নারীর মাথায় চারটি গুলি লেগেছে। তার বাঁচার আশা ক্ষীণ বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। এ ঘটনার জের ধরেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এরই মধ্যে আটক অং সান সু চিসহ বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণ তাদের জোরালো কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে এবং পুরো বিশ্ব তা দেখছে।’ পরিস্থিতি আগের পর্যায়ে ফিরে না গেলে প্রয়োজনে আরো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাইডেন।
বাইডেন জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন এই সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞার প্রথম লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। যদিও মিয়ানমারের কিছু সামরিক নেতা এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত রয়েছেন।
বাইডেন আরো বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী রপ্তানি নিয়ন্ত্রণও আরোপ করতে যাচ্ছি। আমরা মিয়ানমার সরকারের জন্য মার্কিন সেবাগুলো স্থগিত করছি।’
এদিকে কারফিউ উপেক্ষা করেই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেছেন। রাজধানী নেপিদো ছাড়াও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গত নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সু চিসহ নির্বাচিত নেতাদের আটক করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। সেনা সমর্থিত বিরোধী দল শোচনীয় অবস্থায় পড়ে।
এদিকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের আট দিন পর গত সোমবার প্রথম টেলিভিশন ভাষণে সেনাপ্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বললেন, ‘নভেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’
জেনারেল বলেন, তাঁর শাসনামল ২০১১ সাল পর্যন্ত চলা ৪৯ বছরের সামরিক নিয়ন্ত্রণের মতো হবে না। ‘সত্যিকারের ও নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মিন অং হ্লাইং।
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা বলছেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করে না তারা।