মুখ সেলাই করছেন মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
অভাবনীয় এক পথ বেছে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে মরিয়া একদল বিক্ষোভরত অভিবাসনপ্রত্যাশী।
মেক্সিকোর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মার্কিন সীমান্তের দিকে যাওয়ার অনুমতি পেতে নিজেদের মুখ সেলাই করে নেন বৈধ কাগজপত্রবিহীন এক ডজন অভিবাসনপ্রত্যাশী। মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স বলছে—উল্লিখিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগই মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দা। রয়টার্সের প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা যায়, সুই ও প্লাস্টিকের সুতো ব্যবহার করে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা একে অপরকে ঠোঁট সেলাই করতে সাহায্য করছেন। সেলাইয়ের স্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হচ্ছে। কেবল তরল বা পানি পানের জন্য ঠোঁটের সামান্য জায়গা ফাঁকা রাখা হয়।
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ‘প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তাদের ঠোঁট সেলাই করছে’ বলে দাবি করেন ইরিনিও মুজিকা নামের এক মানবাধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি—ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউট দেখবে যে, ওদের (অভিবাসনপ্রত্যাশী) রক্ত ঝরছে, ওরা মানুষ।’
মেক্সিকোর মাইগ্রেশন এজেন্সি-আইএনএম এক গণবিবৃতিতে বলেছে, ‘উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিনিধি দাবি করা ব্যক্তিদের সম্মতি ও সমর্থন নিয়ে। এসব লোকের উদ্দেশ্য হলো কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া। যদিও এরই মধ্যে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি দিয়েছে।’
গুয়াতেমালা সীমান্তবর্তী শহর তাপাচুলায় নাটকীয় এক প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের কারও কারও সঙ্গে তাঁদের সন্তানও ছিল। অবাধে মেক্সিকো সীমান্ত পেরোনোর উদ্দেশে কয়েক মাস ধরে ওই শহরে অবস্থান করছেন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। বৈধ কাগজপত্র পাওয়ার অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
‘আমার মেয়ের জন্য এসব করছি’, বলছিলেন ভেনিজুয়েলার ইয়োরগেলিস রিভেরা। তিনি বলেন, ‘মেয়েটা গত কয়েক ঘণ্টায় কিছুই খায়নি। এদিকে, আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও... কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছি না।’
‘আমরা এখানে বন্দির মতো রয়েছি’, যোগ করেন রিভেরা। তিনি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মেক্সিকোর অভিবাসন সংস্থার পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছেন৷
এদিকে, ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউট বলছে—তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদনগুলো যাচাই করে দেখছে। এবং এ ক্ষেত্রে শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী নারী, অপরাধের শিকার ভুক্তভোগী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্কদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মেক্সিকোর অভিবাসন সংস্থাটি আরও বলছে—দক্ষিণাঞ্চলীয় ওই শহরে তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে থেকে প্রতিদিন শতাধিক আবেদনপত্র পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে বাঁচতে মেক্সিকোতে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত বছর মেক্সিকোতে আশ্রয় চেয়ে আবেদনের সংখ্যা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। আবেদনকারীদের বেশির ভাগ হাইতি ও হন্ডুরাসের বাসিন্দা।
মেক্সিকোতে বিদেশিদের আসার সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভেনেজুয়েলার নাগরিক। মেক্সিকোতে প্রবেশে ভেনেজুয়েলাবাসীর এখন ভিসা লাগে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর সম্প্রতি বলেছে, নতুন সহায়তা কর্মসূচির বিষয়টি মেক্সিকো কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।