যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি ‘নাকবা’র স্বীকৃতির জন্য লড়ছেন রাশিদা তাইব
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তাইব ‘ফিলিস্তিনি নাকবা’র স্বীকৃতির জন্য দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রটির গোড়পত্তনের সময় এবং তার আগে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিককে শক্তি প্রয়োগ করে বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টি ফিলিস্তিনি পরিভাষায় ‘নাকবা’ হিসেবে বেশি পরিচিত।
প্রতিনিধি পরিষদে গতকাল বুধবার এই প্রস্তাবটি তোলা হয় এমন একটি সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে সামনে তুলে ধরতে ও ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাকে রুখে দিতে আগের চাইতে বেশ তৎপর।
‘নাকবা’ শব্দটির আরবি অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘বিপর্যয়’, যা ইসরায়েলিদের নির্যাতনে স্বদেশ থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া ও নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য করার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে।
‘নাকবা’কে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিভেদের ‘শেকড়’ হিসেবে অভিহিত করে ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতি অবিচার ও নাকবার প্রতিকার না করে একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বলা হয়েছে, একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তাইব এই সপ্তাহে প্রস্তাবনাটি উত্থাপন করতে যাচ্ছেন। যদিও প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি প্রস্তাবটি বাতিল করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ম্যাকার্থি তার টুইটার বার্তায় বরেন, ‘ইভেন্টটি ইউএস ক্যাপিটলে বাতিল করা হয়েছে।’
তবে, বুধবারের ওই ঘটনার পর এ সম্পর্কিত স্মারকটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল দর্শনার্থী কেন্দ্র থেকে পাশের সিনেট অফিস ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যদিও তা এখনও ক্যাপিটল ক্যাম্পাসেই রয়েছে।
এদিকে, স্থান পরিবর্তনের পরে বেশ কিছু ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী-সমর্থক ফিলিস্তিনিদের পোশাক থোব গায়ে জড়িয়ে সিনেটের শুনানি কক্ষে ভিড় করে। সে সময় রাশিদা তাইব সমবেত লোকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কংগ্রেসে এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা তুলে ধরার সূচনায় জোড়াল ভাষায় ও পরিষ্কারভাবে বলছি- নাকবা ঘটেছিল ১৯৪৮ সালে এবং এটি কোনো দিনও শেষ হয়নি।’
এ সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলপন্থী সংগঠন অ্যান্টি ডিফামেশন লিগ বা এডিএলের প্রধান জোনাথন গ্রিনব্লাট প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ম্যাকার্থিকে চিঠি লিখে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান ও উদ্যোগটিকে ইসরায়েল বিরোধী ও ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি রাশিদা তাইবের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের অভিযোগও আনেন।
গতকাল বুধবার রাশিদা তাইব উল্লেখ করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইট ওয়াচসহ বেশ কিছু স্বনামধন্য মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্ণবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।
এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো রাশিদা তাইব কংগ্রেসে ‘নাকবা প্রস্তাবনা’ তুলে ধরলেন। আগামী ১৫ মে ফিলিস্তিনি ও তাদের সমর্থকদের নাকবা দিবসকে সামনে রেখে দিবসটি পালনের মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি এই প্রস্তাবটি আবারও সামনে তুলে ধরেন। রাশিদা তাইবের এই প্রস্তবনায় সমর্থন রয়েছে আরও পাঁচ ডেমোক্রাট সদস্যের।
এই প্রস্তাবনায় আরও বলা হয় ‘নাকবা কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনাই নয়, বরং একটি চলমান প্রক্রিয়া যাতে রয়েছে ইসরায়েলের জন্য আলাদা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভারসাম্যহীন আইন ও নীতি। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস, অবৈধ স্থাপনা বাড়ানো ও নির্মাণ করা এবং ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসা ভূখণ্ডে ইসরায়েলিদের হাতে ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঘটনা।
যদিও প্রস্তাবনাটি কংগ্রেসে পাস হবে না, কিন্তু এই উদ্যোগ ইসরায়েলপন্থীদের বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েলের সমালোচনাকারী হিসেবে প্রগতিশীলদের সোচ্চার ও দৃঢ় অবস্থান। তবে, এই ফিলিস্তিনি বংশোদভূত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, এই প্রস্তাবনার অন্যতম লক্ষ্য হলো ‘নাকবা’ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো।
রাশিদা তাইব বলেন, ‘আমি লোকজনকে বোঝাতে চাই—ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন কী, সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থে কেমন এবং ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে। আমি সত্যিকার অর্থে সেই ইতিহাসকেই তুলে ধরতে চাই।’
ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। যে ঘটনাকে অনেক ইতিহাসবিদ জাতিগত নির্মূল কার্যক্রম হিসেবে বর্ণনা করেছেন।