যে কারণে হুট করে সৌদিতে জেলেনস্কি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে হচ্ছে আরব লীগ সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দিতে সেখানে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে আরব লীগের নেতারা। নতুন করে ফের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্টও সম্মেলনে যোগ দিতে পৌঁছেছেন। তবে, ঠিক সম্মেলনের দিনই সৌদি আরবে আকস্মিক সফর করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আজ শুক্রবার (১৯ মে) এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।
আরব লীগ সম্মেলনে যোগ দিতেই জেলেনস্কি সৌদিতে গেছেন বলে জানা গেছে। আরব দেশের জোটটির বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আশা করছি, আমাদের বেশিরভাগই শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য এখানে আছেন। আমাদের কাছে অতো ক্ষেপণাস্ত্র নেই যেগুলো আমাদের শত্রুদের কাছে রয়েছে।’
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা পোশাক পরিধান করে সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের আকাশ ব্যবস্থা শক্তিও কম; আমাদের কাছে অনেক ঘাতক ড্রোন নেই, যা ইরান রাশিয়াকে সরবরাহ করে। আমাদের কাছে অতো আর্টিলারিও নেই। কিন্তু, আমরা এখনও শক্ত রয়েছি, কারণ আমাদের অন্তরে সত্য রয়েছে।’
নিজের বক্তব্যর শেষে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি এই বলে শেষ করছি, আপনারা সবাই মুসলিম কমিনিউটিসহ আমাদের জনগণকে রক্ষায় সাহায্য করুন।’
এই সম্মেলনে ছিলেন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া অঞ্চলের মুসলিম তার কমিনিউটির নেতা মুস্তফা ঢেমিলেভ।
নিজের বক্তব্যে জেলেনস্কি আরব বিশ্বের সঙ্গে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত সম্পর্কের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক পোস্টের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা জানান জেলেনস্কি। পোস্টে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট লেখেনে, ‘আরব বিশ্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ইউক্রেনের সম্পর্ক বাড়াতে সৌদি আরবে আমার প্রথম সফর শুরু। ক্রিমিয়ার রাজনৈতিক বন্দি এবং অস্থায়ীভাবে আমাদের দখলকৃত অঞ্চল, আমাদের জনগণের প্রত্যাবর্তন, শান্তি ফর্মুলা, এনার্জি সহযোগিতায় সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এবং আমরা আমাদের সহযোগিতাকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকেই সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। তবে, সফরগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ। হুট করেই সৌদি আরবে এলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। সৌদি থেকে জাপানের উদ্দেশে যাবেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিবেন।
আল-জাজিরা বলছে, সৌদিতে জেলেনস্কির এই সফর তার কৌশল পরিবর্তনের একটি অংশ। তিনি এমন সব দেশ থেকে সমর্থন জোগাড় করতে চাচ্ছেন, যেসব দেশের নাগরিকরা কিনা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধী ও তাদের দমিয়ে রাখছে তাদের নিজ নিজ দেশগুলো।
আরব বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিরপেক্ষতা পথ অবলম্বন করছে। আবার অনেক দেশ মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে।
যুদ্ধ সত্ত্বেও রিয়াদ ও মস্কোর মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। দেশ দুটি তেল উৎপাদন কমানোর দিক থেকে একমত পোষণ করেছিল। এমনকি, দেশ দুটি সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাসের সদস্য। গত বছর ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যেসব বন্দি বিনিময় হয়েছিল, এর বেশিরভাগেরই মধ্যস্থতাকারী ছিল সৌদি আরব।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার কাছে বন্দি অবস্থায় থাকা আমাদের লোকদের মুক্তির বিষয়ে ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সৌদি। এমনকি, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটও দিয়েছিল রিয়াদ।
মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সংঘাত শুরুর আগের বছর অর্থাৎ, ২০২১ সালে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে ভিসা দেওয়ার প্রোগ্রাম চালু করেছিল ইউক্রেন। একইসঙ্গে দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য হাজার হাজার আরব শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। আরব লীগ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে এসব কথা টেনেছিলেন জেলেনস্কি।