রাহুলের এমপি পদ হারানো নিয়ে যে যা বললেন!
মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের পরের দিনই লোকসভার সদস্য (এমপি) পদ হারিয়েছেন ভারতের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুরে রাহুলকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে লোকসভা সচিবালয়। ওই প্রজ্ঞাপনে রাহুলের নির্বাচনী এলাকার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশন এখন আসনটিতে বিশেষ নির্বাচন দিতে পারেন।
রাহুল কেরালার ওয়েনাড লোকসভা আসনের সদস্য। তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করছে কংগ্রেস। ওয়েনাডের এমপির মুখ বন্ধ করতেই এমনটি করা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
এমপি পদ হারিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের ভেরিফাইড পেজ থেকে এক পোস্টে রাহুল লেখেন, ‘আমি ভারতের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি এবং এর জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত আছি।’
আর কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্টের লোকসভার সদস্য পদ বাতিল নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘অভ্যাসগতভাবে অবান্তর কথাবার্তা বলে আসছে রাহুল। তিনি মনে করেন, অবান্তর কথা বললেও তাকে কোনো পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে না।’ আর ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র রবি শংকর বলেন, ‘কংগ্রেস নেতা রাহুলের বিরুদ্ধে আদালত যথাযথ বিচারিক অনুসরণ করেছিল।’
এদিকে, রাহুলের সদস্য পদ কেড়ে নেওয়ায় বেশ চটেছেন তাঁর বোন ও কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে একের পর এক টুইট করেছেন তিনি। টুইটারে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক পোস্টে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আপনার সাইকোপ্যাথেরা শহীদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে বিশ্বাসঘাতক বলেছে, মির জাফর বলছে। আপনার দলের এক মুখ্যমন্ত্রী রাহুল গান্ধীর বাবা কে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতদের নিয়ম অনুযায়ী, বাবা মারা গেলে তার ছেলে নিজের পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পাগড়ি পরে।’
প্রিয়াঙ্কা আরও লেখেন, ‘পুরো পরিবার এবং কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়কে অপমান করে আপনি সংসদে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন আমরা নেহেরু নাম রাখি না? এ নিয়ে বিচারক আপনাকে দুই বছরের জেল দিয়েছিলেন। আপনাকে কেন পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্ত করা হলো না?’
রাহুলকে সত্যিকারের দেশপ্রেমী দাবি করে প্রিয়াঙ্কা আদানি গ্রুপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একইসঙ্গে নীরব মোদি ও ললিত মোদি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুলকে সমর্থন দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রাহুলের লোকসভার সদস্য পদ থেকে বরখাস্তকে স্বৈরচারী পদক্ষেপ বলে দাবি করছেন আম আদমি পার্টির এই শীর্ষ নেতা। বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে ক্ষমতাসীন বিজেপি পার্টি রুখতে পারবে না বলে দাবি করছেন তিনি।
দিল্লির পার্লামেন্টের বাইরে কারও নাম না উল্লেখ করে আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক বলেন, ‘একজন অহংকারী স্বৈরশাসক ও অশিক্ষিত ব্যক্তির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে...রাহুল গান্ধীকে লোকসভার সদস্যপদ থেকে বরখাস্ত করা কাপুরুষোচিত কাজ...আমরা আদালতের রায়কে সম্মান করি, কিন্তু আমরা এই রায়ের সঙ্গে একমত নই। দেশের সকলেই ভীত...এখন জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
এদিকে, টুইটারের নিজের ভেরিফাইড পেজে এক পোস্টে কেজরিওয়াল লেখেন, ‘রাহুল গান্ধীকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করা মর্মান্তিক। দেশ খুব কঠিন সময় পার করছে। তারা সারা দেশকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। ১৩০ কোটি মানুষকে তাদের অহংকারী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘বিজেপি দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যেখানে মাত্র একটি রাজনৈতিক দল থাকবে। এটি স্বৈরাচার এবং বিজেপি সরকার স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ শাসকদের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।’
রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ভেরিফাইড টুইটার পেজ থেকে এক পোস্টে বলা হয়, ‘রাহুল গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আপনার ও দেশের জন্য পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে রাস্তায় অনবরত লড়াই করে যাচ্ছেন। গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি সব কিছু করছেন। তাঁর এই লড়াই চলবে।’
লোকসভা সচিবালয় কোনো এমপিকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে না বলে দাবি করছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মানিশ তিওয়ারি। এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কোনো এমপিকে অযোগ্য করতে পারেন। লোকসভা সচিবালয়ের এই অধিকার নেই।’
২০১৯ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময় ওয়েনাডে এক নির্বাচনী জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী লোলিত মোদি ও নীরব মোদির নাম উল্লেখ করে তোপ দাগেন রাহুল। এসময় ভারত থেকে এ দুই ব্যবসায়ীর পালিয়ে যাওয়ার উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন ,‘সব চোরের শেষে একই নাম–মোদি।’ এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মানহানি ও অবমাননার দায়ে মামলা করেন বিজেপি নেতা ও গুজরাটের তৎকালীন মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি। ওই মামলায় গতকাল রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের আদালত। তবে, সাজা দিলেও রাহুলকে এ মামলায় জামিন দেওয়ার পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়েছেন আদালত।