‘লুকিয়ে বাঁচতে চাই না’, বলেছিলেন রুশদি
১৯৮৯ সালের ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে পৃথিবীটা ছিল অন্যরকম। ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি সেদিন ব্রিটিশ-মার্কিন ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিলেন। যার ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল দেশ দেশে।
সালমান রুশদির কলম থেকে বেরিয়েছে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নামের তুমুল বিতর্কিত এক উপন্যাস। খোমেনি মারা যাওয়ার পরেও ‘ফতোয়া’ জারি থেকেছে বছরের পর বছর। সে সময়ের আতঙ্কের দিনগুলো নিয়ে ২০১৯ সালে প্যারিসে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন সালমন রুশদি। বলেন, ‘এভাবে লুকিয়ে বাঁচতে চাই না।’
সালমান রুশদি ১৯৮৮ সালে তাঁর ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি প্রকাশের পর থেকে অব্যাহতভাবে মৃত্যুর হুমকির মুখে রয়েছেন। অনেক মুসলিম মনে করেন—বইটিতে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় নয় বছর রুশদিকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। বইটি অনেক দেশে নিষিদ্ধও করা হয়। বইটি প্রকাশ হওয়ার এক বছর পর আয়াতোল্লাহ খোমেনি সালমান রুশদিকে হত্যার ডাক দেন এবং এর জন্য তিরিশ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর বিভিন্ন দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে ৫৯ জন মানুষ প্রাণ হারান। ওই বইয়ের কারণে নব্বইয়ের দশকে ইতালির মিলানে রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জাপানি অনুবাদক হিতোসি ইগারাসিকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় টোকিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সালমান রুশদি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার একজন সরব প্রবক্তা।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক রুশদি ১৩ বছর বেনামে কাটিয়েছেন। প্রতিনিয়ত পুলিশি পাহারায় কার্যত ‘বন্দি’ থেকেছেন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ছদ্মনামে’র জীবন থেকে বেরিয়ে আসেন রুশদি। এর বছর তিনেক আগেই তেহরান ঘোষণা করেছিল, লেখকের বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিশ বছর ধরে নিউইয়র্কের বাসিন্দা রুশদি।
রুশদি ২০১৯ সালের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে সবকিছু খুব দ্রুত বদলে যায়। এটি অনেক পুরোনো বিষয়। এখন ভয় পাওয়ার মতো আরও অনেক কারণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরও অনেক লোক রয়েছেন, যাঁদের মাথার ওপরে খাঁড়া ঝুলছে।’
পূর্ব ফ্রান্সে ২০১৯ সালে এক বই-উৎসবে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেছিলেন, ‘এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন কাটাই।’ যদিও প্যারিসে ওই সাক্ষাৎকার চলাকালীন ফরাসি প্রকাশকের দপ্তরের বাইরে পুলিশি পাহারা ছিল।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ রুশদির পঞ্চম বই ছিল। বইটি যখন লিখেছিলেন রুশদি, সে সময়ের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘বইটি সম্পর্কে ভুল বোঝা হয়েছিল। (বইটি) সত্যিই লন্ডনের দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের নিয়ে লেখা।’
১৯৮১-তে বুকার পেয়েছিল রুশদির সাড়াজাগানো উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’। এরপর ২০০০ সালে তাঁর ‘মুরস লাস্ট সাই’ বইটিও বুকারের মনোনয়ন তালিকায় উঠেছিল। আর, ২০১৯ সালে বুকার পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রাপকের তালিকায় ঠাঁই পায় রুশদির ‘কিশোট’ উপন্যাসটি।
লেখক সালমান রুশদির ওপর স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় হামলা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, সালমান রুশদিকে যখন শিটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে একটি বক্তৃতার জন্য পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন এক ব্যক্তি মঞ্চে উঠে তাঁর ওপর হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁরা এক ব্যক্তিকে দৌড়ে মঞ্চের দিকে যেতে দেখেন এবং সালমান রুশদিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় তিনি তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। বর্তমানে সালমান রুশদি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন।