শত্রু চাই না, শরিয়াহ আইনে নারীরা স্বাধীনতা পাবে : তালেবান
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্তির বার্তা দিল তালেবান। সেই সঙ্গে তালেবান জানিয়েছে, তাদের শাসনে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী নারীরা স্বাধীনতা পাবে। নিয়ম মেনে সংবাদমাধ্যমও কাজ করতে পারবে।
বিশ্বকে চমকে দিয়ে অতি দ্রুত কাবুল দখল করে ফেলার দুদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তালেবান নেতারা। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা এটা স্পষ্ট করতে চাই, আফগানিস্তান আর কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়। যারাই এতদিন আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সবাইকে আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। শত্রুতর দিন শেষ হয়েছে। দেশের ভেতরে বা বাইরে- কোথাও কোনো শত্রু আমরা চাই না।’
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ সময় সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, ‘গণমাধ্যম যেন আমাদের বিরুদ্ধে কাজ না করে।’
তিনি বলেন, তালেবান সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সংগঠনটি জানিয়েছে যে ‘বেসরকারি গণমাধ্যম স্বাধীন থাকতে পারবে।
জাবিউল্লাহ আরও বলেন, তালেবান সরকার গঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং এ কার্যক্রম ‘সমাপ্তির পরে তা ঘোষণা করা হবে’।
আল-কায়েদা বা অন্যান্য চরমপন্থিদের ঝুঁকি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মুজাহিদ বলেন, ‘আফগানিস্তানের মাটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না।’
এ ছাড়া বিদেশি শক্তির সঙ্গে কাজ করা ঠিকাদার এবং অনুবাদকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মুজাহিদ বলেন, ‘কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে না এবং এই তালেবান ‘আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা বা শান্তি বজায় রাখার জন্য সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে।’
২০ বছর ধরে নেপথ্যে থেকে তালেবানের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে এলেন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী আর ক্যামেরার সামনে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘২০ বছর সংগ্রামের পর দেশকে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি, বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। পুরো জাতির জন্য আজ একটি গৌরবের মুহূর্ত।’
সন্দেহ আর সংশয় নিয়ে আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকা বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তালেবান মুখপাত্র বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা আশ্বস্ত করতে চান যে, কারও কোনো ‘ক্ষতি করা হবে না’।
‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না,’ বলেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলার অধিকার আমাদের আছে। অন্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ম আর আইন অন্যরকম হতে পারে, কিন্তু নিজেদের মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজেদের নিয়মকানুন তৈরি করে নেওয়ার অধিকার আফগানিস্তানের আছে।’
তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘শরিয়াহ আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারাও আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, কোনো বৈষম্য এখানে হবে না।’
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, কাবুলে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক, তালেবান তা ‘চায়নি’। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল, তাদের যোদ্ধারা শহরের প্রবেশ পথগুলোতেই অপেক্ষা করবে, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া ‘মসৃণভাবে’ হতে পারে।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আগের সরকার এতটাই অযোগ্য ছিল যে,… তাদের নিরাপত্তা বাহিনী শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছুই করতে পারেনি। ফলে আমাদেরই তা করতে হয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমাদের শহরে প্রবেশ করতে হয়েছে।’