শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডে শোকস্তব্ধ জাপান
জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নারার যেখানে শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্তম্ভিত ও শোকাহত জাপানিদের ঢল নেমেছে। আজ শনিবারও রক্তাক্ত সেই হত্যাকাণ্ডস্থলে শোকগ্রস্তদের অবিচল স্রোত দেখার কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বন্দুক সহিংসতা বিরল যে দেশে, সে দেশে সবচেয়ে বেশিদিন প্রধানমন্ত্রী থাকা মানুষটির এমন মৃত্যু পুরো জাপানকে স্তব্ধ করে রেখেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী জাপানে সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন আবে, ২০০৬ সালে। ২০১২ সালে ফের ক্ষমতায় ফিরে জাপানের অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সামরিক শক্তি বাড়ানোয় মনোযোগ দেন তিনি।
২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করার পরও ছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয়। দেশটির ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সবচেয়ে বড় অংশও মূলত তাঁরই নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গতকাল শুক্রবার সকালে এলডিপির এক প্রার্থীর প্রচারে নারা গিয়েছিলেন আবে। দলীয় সমাবেশে বক্তৃতা করার সময় তাঁকে পেছন থেকে গুলি করেন ৪১ বছর বয়সি এক আততায়ী। এ ঘটনাকে জাপানের গণতন্ত্রের ওপর নির্মম আঘাত হিসেবেও দেখছেন রাজনীতিকেরা।
শোকের মধ্যেই দেশটিতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ভোটের শেষদিনের প্রচারণাও শুরু হয়েছে। আবে হত্যাকাণ্ড এ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে এবং আবের অনুসারী ফুমিও কিশিদা নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট সরকারকে বড় জয় এনে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আবের মৃত্যু জাপানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি জোরেশোরে হাজির করেছে; নির্বাচনি প্রচার মৌসুমে দেশটির রাজনীতিকদের নিয়মিতই রেলস্টেশনের বাইরে, সুপারমার্কেটের মতো ভিড়ঠাসা এলাকায় মানুষের কাছে সরাসরি গিয়ে ভোট চাইতে দেখা যায়।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা আবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই পড়ে যান। তাঁকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাঁর আর জ্ঞান ফেরাতে পারেনি। হামলার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সাবেক এ জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গুলিবিদ্ধ আবেকে যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, আজ সেখান থেকে একটি গাড়িবহর বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। ওই বহরে আবের মৃতদেহ ছিল এবং বহরটি তার টোকিওর বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
শনিবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদার সঙ্গে জো বাইডেনের কথা হয়েছে; মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আবের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন বলে জানিয়েছে এনএইচকে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রুখতে কোয়াড গঠনের অন্যতম রূপকার আবের মৃত্যুতে জোটের বাকি তিন সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়েছে।