১ মে থেকে ভারতজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকাদানের ঘোষণা
নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ হওয়ায় রাজধানী দিল্লিতে লকডাউনের পাশাপাশি দেশজুড়ে টিকাদান কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এনডিটিভি ও বিবিসির খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।
আগামী ১ মে থেকে গোটা ভারতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার এমন ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
বর্তমানে ভারতে শুধুমাত্র করোনা প্রতিরোধে সম্মুখসারির লোকজনকে টিকা দেওয়া চলছে। এখন ভারতের স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী এবং ৪৫ বছরের বেশি বয়স্করা বর্তমানে টিকা পাচ্ছেন।
টিকা স্বল্পতার মাঝে বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে গণহারে টিকাদান কীভাবে সম্ভব হবে তা পরিষ্কার জানায়নি ভারতীয় সরকার। গত সপ্তাহে ভারত সরকার জানিয়েছিল, তাদের হাতে দুই কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। বর্তমানে যে গতিতে টিকাদান চলছে তাতে নয় দিনে সেগুলো ফুরিয়ে যাওয়ার কথা।
এ পর্যন্ত ভারতের ১২ কোটি ৭১ লাখ ২৯ হাজার ১১৩ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের রাজ্য মহারাষ্ট্রে টিকার সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক টিকাদান কেন্দ্র থেকে লোকজনকে ফিরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গণহারে টিকাদানের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি সেখানে বলেন, ‘ভারতের বেশির ভাগ মানুষকে যাতে অল্প সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়া যায়, তার জন্য গত এক বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে রেকর্ড গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তবে আমরা আগামী দিনে আরও দ্রুত গতিতে কাজ করব।’
১ মে থেকে ভারতের টিকাদান প্রক্রিয়ার তৃতীয় পর্যায় শুরু হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ এপ্রিল থেকে টিকা নেওয়ার সুবিধা অবারিত করা হয় পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব দেশবাসীদের জন্যও। কেন্দ্র জানিয়েছে, তৃতীয় পর্যায়ে টিকা নিতে পারবেন ১৮ উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন সব দেশবাসী।
টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে অর্থ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সেরাম ইনস্টিটিউটকে সম্প্রতি ৬০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। এদিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশি ও বিদেশি সংস্থাকেও এই উৎপাদনে অংশ নিতে উৎসাহ দেওয়া হবে। টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ সরকারকে দিতে বলা হবে। বাকি ৫০ শতাংশ খোলা বাজারে বিক্রি করা যাবে এবং রাজ্য সরকারগুলোকেও পাঠানো যাবে। সংক্রমণের হার ও টিকাদানের হার বিচার করে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে টিকা সরবরাহ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে রাজ্য এবং খোলা বাজারে সরবরাহের টিকার দাম কত হতে যাচ্ছে, তা এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
গতকাল সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, স্বাস্থ্যকর্মী ও ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের টিকাদান চলবে আগের মতোই। কো-উইন অ্যাপের মাধ্যমে সমস্ত নিয়ম মেনেই টিকাদান হবে। তবে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, স্বাস্থ্যকর্মী ও ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের দ্বিতীয় ডোজের টিকাদানকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত একদিনে দুই লাখ ৫৯ হাজার ১৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। টানা ছয়দিন দুই লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হলো। একদিনে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭৬১ জনের। এ পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার ৫৩০ জনের।