২২ সপ্তাহে জন্ম নিয়েও সুস্থ শিশু ফিরেছে বাড়িতে
গর্ভধারণের ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে নবজাতকের জন্ম দেন মা। এর আগে জন্ম হলে নবজাতকের বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। যদিও মাত্র ২২ সপ্তাহে এক শিশুর জন্ম ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা নিয়ে হইচই পড়েছে ওয়েলসে। দেশটির একটি হাসপাতালে ১৩২ দিন থাকার পর সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরা শিশু ইমোজেন বিশ্ব রেকর্ডে আছে দ্বিতীয়তে। আজ রোববার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
ওই শিশুর বাবা-মা বলেছেন, ‘২২ সপ্তাহে আমাদের মেয়ের জন্ম হয়। ওই সময়ে যেকোনো নবজাতকের বাঁচার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ১০ শতাংশ। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সে বেঁচে গেছে ও বাড়ি ফিরেছে।’
গত ৬ সেপ্টেম্বর ওয়েলসের সোয়ানসির সিঙ্গেলটন হাসপাতালে জন্ম নেয় ওই শিশুটি। জন্মের সময় তার ওজন ছিল মাত্র ৫১৫ গ্রাম। ১৩২ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর ব্রিজেন্ডের বাড়িতে গেছে ওই মেয়ে শিশু।
ইমোজেন নামের শিশুর মা ২৮ বছর বয়সী র্যাচেল স্টোনহাউস বলেন, ‘আমার মেয়ে অনেক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সে অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছে।’
এর আগে ২১ সপ্তাহ একদিন অর্থাৎ ১৪৮ দিনে এক শিশু জন্ম নিয়ে বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক শিশুর। এজন্য ওই শিশুর নাম উঠেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রের্কডে। আর ইমোজেন জন্মেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওই শিশুর ১১ দিন পর, অর্থাৎ ১৫৯ দিনে।
ইমোজেনের মা র্যাচেল বলেন, ‘আমার গর্ভে কোন লিঙ্গের সন্তান রয়েছে, খবরটি জানার পর আমরা পার্টি করি। এরপরেই প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। একইসঙ্গে আমার পানি ভেঙে যায়। পার্টির পরের দিনই আমি প্রিন্সেস অব ওয়েলস হাসপাতালে যায়। পরে, আমার স্বামী করি অ্যাম্বুলেন্স যোগে আমাকে সোয়ানসির সিঙ্গেলটন হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে বিপজ্জনক জানিয়ে র্যাচেল বলেন, ‘আমার প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। শুধু চাইছিলাম, আমি ও আমার গর্ভের সন্তান যেন বেঁচে যায়।’
সোয়ানসির সিঙ্গেলটন হাসপাতালে পৌঁছার কয়েক মিনিট বাদেই র্যাচেলের সন্তান প্রসব হয়। এরপরেই নবজাতককে একটি ইনকিউবেটরে নেওয়া হয়।
র্যাচেল বলেন, ‘ছোট্ট এক শিশুকে এনআইসিইউতে দেখি। তার শরীরের সবকিছু পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার শরীরে একটি অংশে এনআইসিইউতে শুয়েছিল আমি বুঝতে পারছিলাম।’ অতীতের কথা চিন্তা করে এই মা আরও বলেন, ‘শিশুটি আমার পেটে ছিল কিন্তু তখন ছিল না। আমার গর্ভে থাকা শিশু আমার সামনেই ছিল। আমার আশেপাশে থাকা সবাই আমাকে সান্তনা দিচ্ছিল।’
অপ্রাপ্ত সময়ে জন্ম নেওয়ার পাশাপাশি ওই মেয়ে শিশুর আরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসক র্যাচেল ও করিকে জানান, তাদের মেয়ের তিন ধাপে রক্তক্ষরণ হয়েছে। একদিন একদিন করে এনআইসিইউতে ৯৮ দিন কেটে যায়। এই সময়ে অগণিত সমস্যার সম্মুখীন হয় শিশুটি। এর মধ্যে রয়েছে হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ ও সেপসিস।
র্যাচেল বলেন, ‘প্রতিদিন আমি আমার মেয়ের সঙ্গে থাকতাম। এতে আমার মন ভালো থাকত। মিডওয়াইফরা আমাকে অনেক সাহায্য করত। পরে আমার মেয়েকে প্রিন্সেস অব ওয়েলস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।’
১৫ জানুয়ারি প্রিন্সেস অব ওয়েলস হাসপাতালের এনআইসিইউতে প্রথমবারের নড়াচড়া করে করি-র্যাচেল দম্পতির মেয়ে। র্যাচেল বলেন, ‘ওই সব দিনগুলো আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেখানকার কর্মীরা আমার পরিবারের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা আমি কল্পনাও করিনি। তারা সব সময় আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। আমাকে সাহস জুগিয়েছে।’
বর্তমানে নিজের বাড়িতে রয়েছে ছয় মাস বয়সী ইমোজেন। তবে, এখনও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। র্যাচেল বলেন, ‘চিকিৎসকরা ইমোজেনের উন্নতি দেখে খুশি। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করছে। এমনকি, ইমোজেন এখন দেখতে পাচ্ছে এবং শুনতেও কোনো সমস্যা নেই তার।’
কী জন্য র্যাচেল প্রি-ম্যাচিওর শিশুর জন্ম দিয়েছে, সে কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে, আগামীতে এই মা আবারও প্রি-ম্যাচিওর শিশুর জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা চিকিৎসকদের।