৯/১১ : আগাম হুঁশিয়ারি পাত্তা দেয়নি বুশ প্রশাসন!
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কয়েক জন কথিত উগ্র ইসলামপন্থির অপহরণ করা দুটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়েছিল। টুইন টাওয়ারে হামলার ৫০ মিনিট না যেতেই আরেকটি উড়োজাহাজ ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সদর দপ্তরের ওপর বিধ্বস্ত হয়। আর, অপহৃত চতুর্থ উড়োজাহাজটি ওয়াশিংটনের কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ওই সন্ত্রাসী হামলা ছিল নজিরবিহীন। দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় ওই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারায় প্রায় তিন হাজার মানুষ। এমন হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্ব। কারণ, এ ধরনের হামলা ছিল অকল্পনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের এত উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কী করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন হামলা হলো, কেউই তা ভাবতে পারছিলেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কেউ কেউ এ হামলার কথা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ ধরনের হামলা যে হতে পারে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি ছিল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঠিক আগে আগে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি নিয়ে তৎকালীন মার্কিন সরকারকে বারবার হুঁশিয়ার করা হয়েছিল। ওই হামলার বহু বছর পর সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে সে কথা প্রকাশ করেন সাবেক ডেমোক্র্যাট সিনেটর গ্যারি হার্ট।
গ্যারি হার্ট সে সময় ছিলেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত একটি কংগ্রেস কমিশনের প্রধান। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়েও ছিলেন।
গ্যারি হার্টের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হওয়ার বিষয়ে নাইন-ইলেভেনের আগের মাসগুলোতে দেওয়া হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করেছিল তৎকালীন জর্জ বুশ সরকার। যে মানুষগুলো সে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাঁদের একজন গ্যারি হার্ট।
গ্যারি হার্ট মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক এক তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি পরবর্তী সময়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির বিষয়ে তাঁদের হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করেছিল জর্জ বুশের সরকার।
গ্যারি হার্ট বলেন, ‘আমি বা অন্যরা ঠিক জানতে পারিনি যে কোথা থেকে এ হামলা আসতে পারে। কিন্তু আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, খুব শিগগির একটা হামলা হতে যাচ্ছে।’
মার্কিন নিরাপত্তা ঝুঁকির ওপর আগাম প্রতিবেদন
নাইন-ইলেভেন হামলার মাত্র আট মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির ওপর একটি তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ব্যাপক তদন্তের পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। যে সরকারি কমিশন ওই তদন্ত করেছিল, তার যৌথ নেতৃত্বে ছিলেন সিনেটর গ্যারি হার্ট ও রিপাবলিকান দলের ওয়ারেন রাডম্যান। হার্ট-রাডম্যান কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয় ছিল ‘নতুন শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো কী ধরনের হবে’।
হার্ট-রাডম্যান কমিশন ২০টি দেশের শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এত বড় তদন্ত-পর্যালোচনা কখনও হয়নি। ওই কমিশনে যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞরা। যে উপসংহার তাঁরা টেনেছিলেন, তা ছিল খুবই ভীতিকর।
গ্যারি হার্ট বলেন, ‘কমিশনের ১১ সদস্য তাঁদের তদন্ত বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিপদের মুখে রয়েছে। আমরা ওই প্রতিবেদনে বলেছিলাম—এমন ঝুঁকি রয়েছে, যার পরিণতিতে বিপুল মার্কিন নাগরিক মারা যেতে পারে।’
কিন্তু ওই হুঁশিয়ারি মার্কিন সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়েছিল? গ্যারি হার্ট বলেন, কেবল সরকার নয়, এমনকি সংবাদমাধ্যমও ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়নি।
গ্যারি হার্ট বলেন, “প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করার পর আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। আমাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাঝেই একজন সাংবাদিক চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান। তাঁকে প্রশ্ন করি—কেন তিনি আগেভাগে চলে যাচ্ছেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এমন কিছুই (হামলা) ঘটবে না।’” ওই সাংবাদিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন।
‘সুতরাং বলতে পারেন, গণমাধ্যম আমাদের ওই প্রতিবেদনকে তখন পাত্তাই দেয়নি’, বলেন গ্যারি হার্ট।
হার্ট-রাডম্যান কমিশনটি গঠন করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন। কিন্তু ২০০১ সালের জানুয়ারিতে যখন ওই কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন হোয়াইট হাউসে নতুন সরকার। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার মাত্র ১১ দিন আগে রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
কমিশন সিদ্ধান্তই নিয়েছিল, নতুন প্রেসিডেন্ট যিনি হবেন, তাঁর হাতে তারা তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ তুলে দেবে। কিন্তু, তা হয়নি।
সিনেটর গ্যারি হার্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (বুশ) আমাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজিই হলেন না। আমরা ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড চেনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলাম। তাতেও আমরা ব্যর্থ হই।’
তবে কমিশন তৎকালীন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। একই সঙ্গে তাঁরা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কনডোলিৎসা রাইসের সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু কমিশনের প্রতিবেদনকে ওই তিনজন কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন?
গ্যারি হার্ট বলেন, ‘আমার মনে হয়, দুই মন্ত্রী আমাদের কথা গুরুত্বসহ শুনেছিলেন। তাঁরা আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নও করেছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড তো একটি হলুদ রঙের নোটবই বের করে বেশকিছু নোটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর কোনো ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।’
বুশ প্রশাসন পরে জানায়, সুনির্দিষ্ট নয় এমন কোনো হুঁশিয়ারিকে বিবেচনায় নেওয়া কঠিন। তারা বলে, উড়োজাহাজ অপহরণ করে তা দিয়ে হামলা চালানো হবে, এমন কোনো ইঙ্গিতই কমিশন দেয়নি।
উড়োজাহাজের ব্যবহার নিয়ে সাবধান করা হয়
হার্ট-রাডম্যান কমিশনের প্রতিবেদনে এ রকম কোনো ইঙ্গিত ছিল না যে উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করে তা দিয়ে আক্রমণ চালানো হতে পারে। কিন্তু নাইন-ইলেভেন হামলার আগে অন্য সূত্র থেকেও সন্ত্রাসী হামলায় উড়োজাহাজের ব্যবহার নিয়ে সতর্কবাণী এসেছিল।
২০০১ সালের জুলাইয়ে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সের একজন এফবিআই (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) কর্মকর্তা একটি মেমো পাঠিয়েছিলেন, যা এখন বিখ্যাত দলিলে পরিণত হয়েছে। ওই মেমোতে তিনি কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে সে ব্যাপারে তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন। এফবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা মেমোতে জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা কয়েকজন লোক সেখানে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে।
পরের মাসেই ফিনিক্স থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জাকারিয়া মুসাভি নামের একজন ফরাসি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে এফবিআই।
উড়োজাহাজ চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ওই ব্যক্তি বোয়িং-৭৪৭ চালানোর প্রশিক্ষণের আশায় স্থানীয় একটি ফ্লাইং স্কুলে হাজির হলে এফবিআইয়ের সন্দেহ হয়। এফবিআইয়ের আইনজীবী কলিন রাউলিকে গভীর রাতে ফোন করে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।
মুসাভির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও কম্পিউটার পরীক্ষা করার অনুমতি জোগাড় করে দেওয়ার জন্য ওই আইনজীবীকে ফোন করেছিলেন এফবিআই এজেন্টরা। কিন্তু পরে এফবিআইয়ের কর্তাব্যক্তিরাই এ নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২০০৫ সালে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবী কলিন রাউলি ওই ঘটনা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছিলেন।
কলিন রাউলি সে সময় বলেছিলেন, “আমাদের একজন সুপারভাইজার সদর দপ্তরে একজন কর্মকর্তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কি বুঝতে পারছ না যে এই লোক (মুসাভি) ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে উড়োজাহাজ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে?’ কিন্তু এফবিআই কর্মকর্তা জবাব দিয়েছিলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা কখনোই ঘটবে না।’”
জাকারিয়া মুসাভি পরে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছিলেন।
কলিন রাউলি মনে করেন, এসব হুঁশিয়ারি সরকার তখন অগ্রাহ্য করেছিল, কারণ তৎকালীন সরকারের কেউ বিশ্বাসই করতে পারেনি যে এমন কোনো ঘটনা সত্যিই কখনও ঘটতে পারে। তবে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর ভেতরে সন্দেহ দানা বাঁধছিল।
কী বলেছিলেন তৎকালীন সিআইএর প্রধান
২০০১ সালে সিআইএর প্রধান ছিলেন জর্জ টেনেট। নাইন-ইলেভেন হামলার ১৪ বছর পর মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএসে এক সাক্ষাৎকারে সিআইএর প্রধান বলেন, ২০০১ সালের গ্রীষ্মে তাঁদের কাছে তথ্য প্রমাণ আসে যে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে।
সিআইএর যে ইউনিট আল-কায়েদার ওপর নজরদারি করত, তার প্রধান রিচ প্লি ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
জর্জ টেনেট বলেন, “২০০১ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে একদিন আমরা আমার কনফারেন্স রুমে বসে কথা বলছিলাম। কীভাবে আল-কায়েদা হামলা করতে পারে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। তখন রিচ প্লি বলেছিল, ‘তারা (আল-কায়েদা) যুক্তরাষ্ট্রেই আসছে।’”
‘রিচ প্লির ওই কথা শুনে সবাই যেন জমে গিয়েছিল। সবাই হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল,’ সিবিএসকে বলেছিলেন জর্জ টেনেট।
জর্জ টেনেট জানান, রিচ প্লির কাছ থেকে ওই কথা শোনার প্রায় পরপরই তিনি কনডোলিৎসা রাইসকে ফোন করেন।
জর্জ টেনেট বলেন, “আমি তাঁকে (রাইস) বলি, ‘কনডি, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমরা এখনই আসছি।’”
জর্জ টেনেট আরও বলেন, ‘আমি তাঁকে (রাইস) জানাই, একাধিক হামলা হতে পারে। হামলার ধরন নাটকীয় হতে পারে। আল-কায়েদার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করা। যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
কনডোলিৎসা রাইস পরে বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলার জন্য উড়োজাহাজ ব্যবহার হতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট হুঁশিয়ারি পাননি।’
কনডোলিৎসা রাইস বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের কাছে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে নানা রকম হুঁশিয়ারি ও পরামর্শ আসে।’
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশও বলেন, তিনি এমন কোনো গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখেননি, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছিল।
তবে হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছিল, ২০০১ সালের ৬ আগস্ট তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে ওসামা বিন লাদেন বদ্ধপরিকর।
গ্যারি হার্ট বলেন, যেকোনো সময় হামলা হতে পারে—এ আশঙ্কায় ২০০১ সালের জানুয়ারিতে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই উদ্বেগের কথা তিনি কি কাউকে জানিয়েছিলেন?
গ্যারি হার্ট বলেন, ‘বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি আমার আশঙ্কার কথা বলেছি। সাক্ষাৎকারও দিয়েছি।’
কমিশনের কথা কেন বিশ্বাস করেনি হোয়াইট হাউস
বুশ প্রশাসনের যুক্তি ছিল—কখন, কোথায় ও কীভাবে হামলা হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা কমিশনের প্রতিবেদনে ছিল না এবং এ ধরনের নানা হুঁশিয়ারি হোয়াইট হাউসে প্রতিদিনই আসে। তৎকালীন মার্কিন সরকারের এই যুক্তি কি ফেলে দেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে গ্যারি হার্ট বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলার কোনো উপায় তখন ছিল না। আমি কানাডার মন্ট্রিয়লে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলাম। পরদিন সেখানকার পত্রপত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছিল—হার্ট যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছেন।’ সেটা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকের কথা। এর পরপরই কনডোলিৎসা রাইসের সঙ্গে গারি হার্টের বৈঠক হয়।
গ্যারি হার্ট বলেন, ‘আমি তাঁকে (কনডোলিৎসা রাইস) বলি, অনুগ্রহ করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী) প্রস্তুত করুন। আমাদের ওপর হামলা হতে যাচ্ছে। সেটা ৬ সেপ্টেম্বরের কথা।’
‘কনডোলিৎসা রাইস আমাকে জানান, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। ...পাঁচ দিন পর তিন হাজার মানুষ মারা গেল’, যোগ করেন হার্ট।
নাইন-ইলেভেন হামলার বিষয়ে গঠিত একটি দ্বিদলীয় তদন্ত কমিশন ২০০৪ সালে বলেছিল—‘প্রশাসনে নীতি, ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল।’ ওই কমিশনের প্রতিবেদনে গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপদ্ধতিতে ব্যাপক রদবদলেরও সুপারিশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের এক মাস আগে তৎকালীন সিআইএর প্রধান জর্জ টেনেট পদত্যাগ করেন।’