৯/১১ হামলায় সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্টতা পায়নি এফবিআই
ন্যক্কারজনক ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীতে এ হামলা সম্পর্কিত তদন্তের নথি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এফবিআই। তদন্ত সম্পর্কিত নথি প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের স্বজনেরা। গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাহী আদেশের পর এই নথি প্রকাশ করা হলো।
তদন্তের প্রথম নথি শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করেছে এফবিআই। নথিতে বিমান ছিনতাইকারী দুই সৌদি নাগরিক এবং তাদের সহায়তাকারী স্বদেশিদের বিষয়ে তথ্য উঠে এলেও মেলেনি ওই হামলায় রিয়াদ সরকারের সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য।
অন্তত তিন হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই ঘটনার ২০তম বার্ষিকী ছিল শনিবার। এদিনই এফবিআইকে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের নির্দেশনা দেন বাইডেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
মার্কিন নাগরিকদের জোর দাবির মুখে প্রকাশিত এফবিআইয়ের ১৬ পৃষ্ঠার এ নথিতে বলা হয়েছে, সেই হামলায় বিমান ছিনতাইকারী দুজন ছিলেন সৌদি নাগরিক। তারা হলেন খালিদ আল-মিহধর এবং নওয়াফ আল-হাজমি।
দীর্ঘদিন তদন্তের পর ২০১৬ সালে প্রস্তুতকৃত ওই নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সূত্র ও সাক্ষীর ভাষ্য বিশ্লেষণে এফবিআই ওমর আল-বিয়ুমী নামে লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থানরত এক সৌদি শিক্ষার্থীকে সন্দেহ করে। তাকে সৌদি সরকারের গোয়েন্দা মনে করতো এফবিআই। ওই ব্যক্তি সেই দুই ছিনতাইকারীকে ‘ভ্রমণ সহায়তা, অবস্থান ও অর্থায়নে’ সর্বাত্মকভাবে জড়িত ছিল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসীরা যাত্রীবাহী চারটি বিমান ছিনতাই করে একযোগে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ও ভার্জিনিয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনে হামলা চালায়। হামলার সঙ্গে সঙ্গে ধসেপড়ে নিউইয়র্কে অবস্থিত বিশ্বের তৎকালীন সর্বোচ্চ ভবন টুইন টাওয়ার। হামলায় অন্তত তিন হাজার লোক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব বরণ করেন বা আহত হন ছয় হাজারের বেশি মানুষ।
এ হামলা চালায় সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার সদস্যরা। কিন্তু ঘটনাটির জন্য ঢালাওভাবে আরব-মুসলিমদের দোষারোপ করা হয়। এর জেরেই তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আল-কায়েদা দমনে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন, যা সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে শেষ করেছে ওয়াশিংটন।
ওই হামলায় জড়িত ১৯ প্লেন ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জনই ছিল সৌদি আরবের নাগরিক। সেজন্য ভুক্তভোগীদের স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের নথি প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি ভুক্তভোগীদের ১৬০০ জন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করার পাশাপাশি সৌদি আরবের ভূমিকার কথা খোলাসা করার দাবি জানান। ওই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, সৌদির কর্মকর্তারা আগে থেকেই এ পরিকল্পনা জানতেন এবং হামলা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
কিন্তু হামলায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা বরাবরই নাকচ করেছে সৌদি সরকার। ওয়াশিংটনে দেশটির দূতাবাসের পক্ষ থেকে গত বুধবারও বলা হয়, তারা এফবিআইয়ের তদন্তের নথি প্রকাশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। ওই ঘটনার সঙ্গে সৌদি সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।